বগুড়া-৪ আসনের কাহালু ও নন্দীগ্রামে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করেছেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। শুক্রবার দুপুরে বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি বগুড়া: ঢাকায় আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশে’ দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বগুড়ার দুটি আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হেরে যাওয়া মো. আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম বলেছেন, ‘আপনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, হিরো আলম নাকি জিরো হয়েছে। এটা ভুল বলেছেন। হিরোকে কেউ কখনো জিরো করতে পারে না। হিরো হিরোই থাকে। আমাকে জিরো কেউ বানাতে পারেনি, পারবেও না। এটা আপনি ভুল বলেছেন। হিরোকে যাঁরা জিরো বানাতে এসেছে, তাঁরাই জিরো হয়েছে।’
শনিবার রাত নয়টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
ফেসবুক লাইভে হিরো আলম আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমি আগে থেকেই বলেছিলাম, বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠ (সুষ্ঠু) হয়েছে। কোনো কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্ট বের করেও দেওয়া হয়নি। কাহালুতে ৬৩টি কেন্দ্রে প্রায় ২ হাজার ৫০০ ভোটে এগিয়ে ছিলাম। নন্দীগ্রামে ৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ থেকে ৩৯টি কেন্দ্রের ফল একে একে ঘোষণা করা হয়। তারপর আর ফল ঘোষণা না করে সরাসরি মশাল প্রতীককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কাহালু উপজেলায় ৬৩টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার দুই ঘণ্টা পর নন্দীগ্রাম উপজেলার ৪৯টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ৮৩৪ ভোটে যে আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে, আমাকে কীভাবে ফেল দেখানো যায়, সেই চিন্তা করতে করতেই দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। আবার ভোট গণনা চেয়ে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বলেন, ‘দু-তিন ধরে কিছু দল আমাকে নিয়ে নানা কথা বলছে। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্যার হিরো আলমকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন। হিরো আলমকে নাকি বিএনপি দাঁড়িয়ে (দাঁড় করিয়ে) দিয়েছে। বিএনপির কোনো সাইনবোর্ড নিয়ে কি আমি ভোট করেছি? বিএনপির কেউ কি মাঠে ছিল? আমার পাশে ছিল? আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করেছি, আমাকে কিন্তু বিএনপি দাঁড় করে (করিয়ে) দেয়নি।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই প্রসঙ্গে তুলে হিরো আলম বলেন, ‘মির্জা আলমগীর বলেছেন, এই সরকার এখন অসহায় হয়ে গেছে। এই সরকার অসহায় হয়েছে কি না, আমি জানি না। তবে আমি হিরো আলম যে অসহায় হয়েছি, এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আমার ভোটের ফলাফল যে কেড়ে নেওয়া হলো, এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আমি কার কাছে বিচার দেব। আমি যাঁদের কাছে বিচার দিতেছি, তাঁরা কেউ বিচার করছে না।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে হিরো আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের সবার বিচার তো আপনি করেন। আমি আপনার কাছে বিচার দিলাম। আমার ভোট সুষ্ঠমতো (সুষ্ঠুমতো) হলো, কিন্তু ভোটের ফলাফল সুষ্ঠমতো রায় দেওয়া হলো না কেন? এর বিচার চাই।’
হিরো আলম এখন বিএনপির কাঁধে ভর দিয়ে চলছে—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হিরো আলম কারও কান্দের ওপর ভর দিয়ে চলে না। আজকে এত দূর এসেছি, কেউ সহযোগিতা করেনি। নিজের পরিশ্রম, সংগ্রাম করেই আমি হিরো আলম হয়েছি। কারও ওপর ভর করিনি।’
লাইভে হিরো আলম আরও বলেন, ‘পুরো পরিকল্পনা ও চক্রান্ত করে হিরো আলমকে হারানো হয়েছে। ভোটে যে গণজোয়ার দেখেছি, হিরো আলম হারতে পারে না, হারার প্রশ্নই আসে না।’
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে লাইভে হিরো আলম বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের স্যার বলেছেন, হিরো আলম পার্লামেন্টে গেলে নাকি পার্লামেন্ট ছোট হবে। আমি যদি পার্লামেন্টে গেলে পার্লামেন্ট ছোট করা হয় তবে যখন মনোনয়ন কিনছি, তখন কিন্তু আপনাদের বলা উচিত ছিল, হিরো আলমের কাছে যেন মনোনয়ন বিক্রি করা না হয়। আপনারাই বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশ, সবাই নির্বাচন করতে পারবে। সবার যদি নির্বাচন করার কথা আইনে থাকে, তাহলে আমি ভোটে দাঁড়ালে সংসদ ছোট হবে কেন? তাহলে সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে আইন করতে হবে?’
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর নেওয়ার আইন তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর লাগলে দলীয় প্রার্থীদের কেন লাগবে না? আইন সবার জন্য সমান হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান হয় তুলে দিতে হবে। না হলে সবার ক্ষেত্রেই তা নিতে হবে।
হিরো আলম আরও বলেন, ‘অনেকেই আমার যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছেন। পুলিশের সাবেক আইজিপি বলেছেন, আমাকে নিয়ে বলতে তাঁর নাকি রুচিতে বাঁধে। হিরো আলম সংসদে গেলে নাকি সংসদ অবমাননা করা হবে। সংসদে কাজ কী বলুন তো? সংসদে আমরা যাব। জনগণের সুখ–দুঃখের কথা বলব। জনগণের ন্যায্য দাবি তুলে ধরব। আপনারা আমাদের বাজেট দেবেন, সেই অনুযায়ী কাজ করব। সংসদে বিল পাস করে দেবেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করব। আমার যোগ্যতা দিয়ে কী করবেন, চেহারা দিয়ে কী করবেন? এসব তো দরকার নেই। জনগণ যদি এসব ভাবত, তবে এত ভোট আমাকে কেন দিল? আমার এত গণজোয়ার কেন উঠল?’
চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে হিরো আলম বলেছেন, ‘হিরো আলমকে কি নরম মনে হয়? আমি হিরো আলম চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি আপনাদের। প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালটে ভোট দেন, প্রতিটি বুথে সিসিটিভি দেন। ইভিএমে ভোট হবে না, ইভিএম চোর। বাইরের দেশ ইভিএমে ভোট করে না। ইভিএমে এক প্রতীকে টিপ মারলে আরেক জায়গায় যায়। ব্যালটে ভোট দেন।’
নিজে কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন মন্তব্য করে স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বলেন, ‘না আওয়ামী লীগ, না বিএনপি, না অন্য কোনো দল। আমি হিরো আলম—কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত না। আমাকে নিয়ে বেশি মাখামাখি করবেন না।’ হিরো আলম আরও বলেন, ‘আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন ভোটের ফলাফলের সুষ্ঠ বিচার পাই। আমি দেখিয়ে দিতে চাই, আমি সংসদে গিয়ে কথা বলতে পারি কি না।’