আমাদের মিছিল–মিটিং দেখে আওয়ামী লীগের কম্পন শুরু হয়ে গেছে: মির্জা আব্বাস

বিএনপির রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশে শনিবার বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আমরা ধাক্কা দিয়ে সরকারকে ফেলে দিতে চাই না। আমরা চাই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আমরা যাব। আমরা সারা দেশে বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। সেই সঙ্গে এই স্বৈরাচারী সরকারে পতন ঘটবে। এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী নগরের সোনাদীঘির মোড়ে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন।  

বিদ্যুৎ-গ্যাস, নিত্যপণ্যের দাম কমানো, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে ১০টি বড় শহরে একযোগে আজ বিএনপির সমাবেশ হয়। এর অংশ হিসেবে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু।

সভায় প্রধান অতিথি মির্জা আব্বাস তাঁর বক্তব্যে নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা হবে। প্রতিটি পদযাত্রায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের পদভারে আওয়ামী লীগ যেন প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

আওয়ামী লীগের সমাবেশে রাজশাহীকে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে দাবি করার প্রসঙ্গ তুলে মির্জা আব্বাস বলেন, তাঁরা স্বীকার করেছেন, আগে নাকি রাজশাহী বিএনপির ঘাঁটি ছিল, এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হয়েছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে শুধু রাজশাহী কেন, সারা বাংলাদেশ বিএনপির ঘাঁটি হয়ে যাবে।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগকে জনগণ ভোট দেয়নি। এখনো তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। ভোটের প্রয়োজন থাকলে তারা এভাবে বিদ্যুৎ-তেল-গ্যাসের দাম বাড়াত না। জনগণ আর আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে না। কারণ, আওয়ামী লীগ কখনো সত্য কথা বলে না। ১০ টাকা কেজির চাল খাওয়ানোর কথা বলেছিল। এখন চালের দাম কত। ৮০ টাকা কেজি। কোনটা বেশি। আর বলেছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দেব। দিয়েছে? হ্যাঁ, একটা গ্রুপের লোকেরা চাকরি পেয়েছে, যারা আওয়ামী ও বাকশালীদের প্রিয়। এখন তারা বলছে, “চাকরির পেছনে ছুটবেন না, স্বাবলম্বী হন।”’

তিনি বলেন, ‘দেশের সেই অবস্থা কি আওয়ামী লীগ রেখেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য-ঠিকাদারি সব আওয়ামী লীগের লোকেদের। বিএনপির লোকের কোনো কাজকর্ম করার সুযোগ নেই। যেখানেই যান, ঘুষনীতিতে ছেয়ে গেছে দেশ। আজ ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ডলারের সংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনা যাচ্ছে না। খালেদা জিয়ার সময় এই ডলারের দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আজ ডলারের দাম ১২০ টাকা।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘মাথায় যখন পচন ধরে, তখন নিচের দিকে আর কিছু থাকে না। আওয়ামী লীগের মাথায় পচন ধরে গেছে। আমাদের মিছিল-মিটিং পদযাত্রা দেখে আওয়ামী লীগের কম্পন শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচিতে কী রকম ভয় পেয়েছে, তার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ১০ তারিখে সমাবেশ ছিল। আমাদের ৮ তারিখে গ্রেপ্তার করল। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ কী বলেছিল জানেন? “স্যার, আপনারা কি রাস্তায় বসে যাবেন?” কী ভয় পেয়েছে, চিন্তা করেন।’ তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, দেশের ভালোর জন্য জিয়া পরিবারের বিকল্প নেই। এ জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রয়োজন। তারেক রহমানের  দেশে আসা প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এখানে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী বা সমর্থক নন, তাঁরা অনেকেই বক্তব্য শুনতে এসেছেন। আমরা বলতে চাই, সরকারের যদি শুভবুদ্ধির উদয় না হয়, তাহলে আমরা মিছিল-মিটিং ও পদযাত্রার মাধ্যমে এই সরকারের পালানোর পথ দেখিয়ে দেব। তখন পালানোর পথ পাবে না। কোন পথে যাবে, সেই পথ আপনরা ঠিক করে নিয়েন। সেটা আমরা বলতে পারব না। তবে সব কথার এক কথা, আমাদের ১০ দফা দাবি আপনাদের মেনে নিতেই হবে। ১৫ বছর কষ্ট করেছি। আর বেশি দিন নয়। আর মাত্র কয়েকটা দিন কষ্ট করতে হবে।’

সভায় প্রধান বক্তা মিজানুর রহমান বলেন, রাজশাহী তো এখন ভূমিদস্যু ও বালুবাবাদের রাজধানী হয়ে গেছে। ৩৩ কোটি টাকা খরচ করে আওয়ামী লীগের যে সমাবেশ হয়েছে, তা জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজান মিঞা, হাবিবুর রহমান, কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ খান, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রমুখ।