বইমেলা শেষ দিকে, বিভিন্ন স্টলে বই দেখছেন দর্শনার্থীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগে দপ করে জ্বলে ওঠে কয়েকবার। অমর একুশের বইমেলাকে যদি আলোর প্রদীপ ধরা যায়, তো শেষের সেই ক্ষণের দ্বারপ্রান্তে এখন। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্দা নামবে, তার আগে মোটে তিনটি দিন। পাঠক তাই রোববারকেও শুক্রবার বানিয়ে বইমেলা জমজমাট করে তুলেছেন। ২৭তম দিনে তাই বইমেলাকে পাঠকারণ্য বললে ভুল হবে না।
প্রায় তিন হাজার বই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে উপন্যাস, তারপরেই মোটিভেশন ও মার্কেটিংয়ের বই। এরপর শিশুতোষ বই এবং কবিতা। পরের জায়গাগুলো ইতিহাস আর প্রবন্ধের।
এবারের সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হলো, নারীদের লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠা। বিপুল তরুণ নারী লেখক এবার ভালো মানের বই লিখেছেন। সেগুলো সাড়াও ফেলছে।
ইলমা আফরোজের ‘মায়ামৃগ’, মৌসুমী আকতার মৌয়ের ‘তুমি নামে প্রিয় অসুখ’, সানজানা আলমের ‘শ্বেতপদ্ম’, ফারহানা সুলতানার ‘কৃষ্ণচূড়ার দিন’, শিরিন শবনমের ‘অভ্রান্ত বোধ,’ মৌরি মরিয়মের ‘প্রেমাতাল’- এই উপন্যাসগুলো ইতিমধ্যে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। জান্নাতুন নাঈম প্রীতির বই ‘জন্ম ও যোনির ইতিহাস’ সমালোচিত হওয়ার পর বাংলা একাডেমি বইমেলায় তা নিষিদ্ধ করে।
এ ছাড়া শাপলা জাকারিয়ার কল্পবিজ্ঞান ‘ফিনিক্স’, ফারজানা স্নিগ্ধার ‘ভিনগ্রহে ইনকা’, তানজিনা হোসেনের ‘কিনাবুলের গান’ জায়গা করে নিয়েছে কল্পবিজ্ঞানের শর্টলিস্টে। এ ছাড়া রহস্য-রোমান্স উপন্যাসেও আলো ছড়াচ্ছেন তরুণ নারী লেখকরা। বইমেলায় বিক্রি হচ্ছে রুমানা বৈশাখীর ‘অপদেবতা’, জেরিন মুক্তির ‘নিথরের শব্দযাত্রা’, এ মি জান্নাতের ‘রহস্যদিন’।
উগ্রবাদ ও অপশক্তিকে রোখার জন্য নারীদের হাতে কলম ওঠাটা ইতিবাচক। সাহিত্যের বিভিন্ন জনরায় নারীদের সরব উপস্থিতি ভবিষ্যতের সুন্দর ও বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশের আভাস দেয়।
তবে বইমেলায় নিম্নমানের বইয়ের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অবশ্য প্রচ্ছদ আর ছাপা দেখে মান যাচাই করা কঠিন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন প্রবীণ প্রাবন্ধিক জানালেন, সারা বছর একটি লাইনও না পড়া কিংবা না লেখা কিছু লোক বইমেলার আগে কোমর বেঁধে নামেন বই লিখতে। সারা জীবনে হয়তো দুটি বইও পড়েননি, কিন্তু লেখক হওয়ার শর্টকার্ট রাস্তা তারা খুঁজে নিয়েছেন। তাদের ট্যাঁকে পয়সা আছে, সেগুলো ঢেলে যা-তা লিখে বই প্রকাশ করছেন। শুধু টাকার বিনিময়ে বই ছাপান, এমন প্রকাশকের কিন্তু অভাব নেই বাংলাবাজারে।
নিম্নমানের বই নিয়ে হতাশা আছে, কিন্তু এগুলো বন্ধ করার কোনো উপায় এখনো বের করা যায়নি। ‘দিন শেষে প্রকাশকরাও ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের মানুষ যতদিন না প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস করছেন, যতদিন না বই কিনছেন, ততদিন ছোট ছোট প্রকাশকেরও বাড়তি লাভের জন্য নিম্নমানের বই ছেপে যেতে হবে,’ এ কথা বলছিলেন বিশ্বসাহিত্য ভবনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ তফজ্জল হোসেন।