হাইকোর্ট ভবন | ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: এ দেশ হরিলুটের জায়গা কি না–এমন প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। ‘জি বি হোসেন বনাম দুদক এবং অন্যান্য’ মামলার শুনানিকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ আজ সোমবার এমন প্রশ্ন তোলেন।

গাজী বেলায়েত হোসেন জি বি হোসেন নামে পরিচিত। তার বাংলাদেশ ও কানাডার পাসপোর্ট রয়েছে। জাহাজ আমদানি করবেন বলে বেসিক ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ নেন তিনি। তবে পুরো টাকাই কানাডায় পাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০১৯ সালে তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। সেই নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে রিট করলে হাইকোর্ট রুল জারি করেন।

সোমবার শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ‘সে আমাদের দেশের টাকা অন্যায়ভাবে অন্য দেশে নিয়ে গেল, এটা আমরা অ্যালাউ করতে পারি? আইনে কী আছে? যে কানাডার নাগরিক তাকে আমরা টাকা দিচ্ছি কেন? এই দেশ কি হরিলুটের জায়গা? একজন দ্বৈত নাগরিক এভাবে ঋণ নিতে পারে?’ 

দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘সে (জি বি হোসেন) টাকা নিয়ে পাচার করে দিয়েছে।’ হাইকোর্ট বলেন, ‘সে বাংলাদেশের নাগরিক আবার কানাডারও। তার হার্ট (হৃদয়) তো দুই ভাগ হয়ে গেছে। ঋণের টাকা বিদেশে নিয়ে গেলে তা এ দেশে অপরাধ বিবেচিত হলেও ভিনদেশে সেটা না-ও হতে পারে।’ 

খুরশীদ আলম বলেন, ‘বিদেশে অর্থ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা নির্দেশনা আছে। আর কোনো দেশই অনুমোদন দেবে না–যেভাবে পারো নিজ দেশ থেকে টাকা এনে আমাদের দেশে রাখো। কানাডাও তাদের আইনে পরিবর্তন এনেছে। ফলে এখন ইচ্ছেমতো বাড়ি কেনা যাচ্ছে না কানাডায়।’ 

হাইকোর্ট বলেন, ‘শুধু মামলা করে, বক্তব্য দিয়ে কাজ হবে না। অর্থ পাচার রোধে কৌশল গ্রহণ করতে হবে। ভারত সরকার ওই দেশ যারা অর্থ পাচার করে সেই অর্থের ওপর ট্যাক্স কেটে নেয়। আমাদের এখানে কোনো আইন আছে?’ খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমাদের এখানেও কাজ চলছে। কুয়েতে বাংলাদেশের এমপি পাপুলের সাজা হয়েছে। কুয়েতি দূতাবাসও অনেক কাজ করেছে এই ইস্যুতে। সে দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থ আসা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে।’ 

হাইকোর্ট বলেন, ‘একজন লোক বিদেশি নাগরিক। তাকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দিলেন। আইন কী বলে?’ এ সময় জি বি হোসেনের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘তিনি কানাডার নাগরিক হলেও বিদেশে তাঁর অর্থ নিতে আইনে বাধা নেই। দ্বৈত নাগরিকেরা কেবল সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে বিদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।’ হাইকোর্ট বলেন, ‘আমাদের দেশের কতজন নাগরিক আমেরিকা থেকে ঋণ নিয়েছে?’ ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ‘শতভাগ। তারা তো সেখানে ঋণ না নিয়ে কোনো কিছুই করতে পারবে না।’ 

সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর এই দশা হয়েছে গত ১০ থেকে ১৫ বছরে। হাজার হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে। আর এই লুটপাটের টাকা দিয়েই বিদেশে কেউ কেউ বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব অর্জন করছেন, বাড়ি কিনছেন। এখন আইনে পরিবর্তন আনা দরকার। দ্বৈত নাগরিক হলে বা বিদেশি নাগরিক হলে তিনি ঋণ নিতে পারবেন কি না, এই বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা দরকার। হাইকোর্ট এই বিষয়ে রুল জারি করতে পারেন।’ 

দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের অর্থ বিদেশে পাচার নিয়ে ওই ব্যাংকের বক্তব্য শোনা উচিত। কেন তারা একজন দ্বৈত নাগরিককে এত টাকা ঋণ দিল। বাংলাদেশ ব্যাংকেরও বক্তব্য শুনতে পারেন আদালত।’ 

এরপর এ বিষয়ে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন হাইকোর্ট। ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শুনবেন আদালত। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক উপস্থিত ছিলেন।