পাবনা জেলার ম্যাপ

প্রতিনিধি বেড়া: পাবনার বেড়া উপজেলায় কলেজে যাওয়ার পথে বখাটের মারধরের শিকার এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে নিজ ঘরের দরজা ভেঙে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সুস্মিতা খাতুন (১৮) নামের ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেন স্বজনেরা।

সুস্মিতা বেড়া সরকারি কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বেড়া পৌর এলাকার মৈত্রবাঁধা মহল্লার চায়ের দোকানি জাইদুল হোসেনের বড় মেয়ে তিনি। সাঁথিয়া উপজেলার সোনাতলা গ্রামের তরুণ আশিক হোসেনের (২০) বিরুদ্ধে তাঁকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর থেকে আশিককে আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।

স্বজন ও সহপাঠীদের সূত্রে জানা যায়, আশিকের সঙ্গে একসময় বন্ধুত্ব ছিল সুস্মিতার। মাস তিনেক আগে আশিকের বখাটেপনা ও নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর জানতে পেরে সুস্মিতা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আশিক। বিভিন্নভাবে সুস্মিতাকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

সহপাঠীরা জানায়, আজ সকাল ১০টার দিকে সুস্মিতা কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। একই মহল্লার দুই সহপাঠীও (ছাত্রী) তাঁর সঙ্গে ছিল। কলেজের কাছে পৌঁছানোর পর হঠাৎই আশিক তাঁদের পথ রোধ করে দাঁড়ান। এ সময় সুস্মিতা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও আশিক তাঁকে জোর করে রিকশায় তুলে নিয়ে যান। সঙ্গে থাকা সহপাঠীরা কলেজে গিয়ে ঘটনাটি ঘনিষ্ঠ দু-একজন বান্ধবীকে বললেও ভয়ে আর কারও কাছে বিষয়টি বলেননি। পরে দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা কলেজ থেকে বাইরে এসে দেখেন, সুস্মিতা রক্তাক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। এ সময় বেশ কিছুটা দূরে আশিক দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে সহপাঠীরা রিকশায় করে সুস্মিতাকে বাড়ি নিয়ে আসেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ি ফিরে সুস্মিতা মাসহ স্বজনদের জানান, আশিক তাঁকে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত করেছেন। একপর্যায়ে তিনি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। দীর্ঘ সময় ঘর থেকে তাঁর সাড়া না পেয়ে স্বজনেরা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেন, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ফাঁস দিয়েছেন। বাড়ির লোকজন দ্রুত তাঁকে নামিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর থেকে বাড়িতে আহাজারি করছেন সুস্মিতার মা পলি খাতুন। প্রতিবেশীরা জানান, দরিদ্র বাবার চায়ের দোকানের সামান্য আয়ে তাঁদের সংসার চলে। সুস্মিতা বড় মেয়ে ছিল। ছোট মেয়ে সুবর্ণা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সুস্মিতার বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন, দুই মেয়েকে পড়ালেখা শিখিয়ে স্বাবলম্বী করবেন; কিন্তু এক বখাটের কারণে তাঁর মেয়ের এভাবে চিরতরে বিদায় নেওয়ার বিষয়টি তাঁরা কেউই মানতে পারছেন না।

ঘটনার সময় সুস্মিতার সঙ্গে থাকা তাঁর বান্ধবী জানায়, সুস্মিতা সব সময়ই আশিকের ভয়ে থাকতেন। বিশেষ করে কলেজে যাওয়ার সময় তিনি ভয়ে থাকতেন। রিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়ার পর সুস্মিতাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রিকশায় বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় সুস্মিতা তাঁদের জানিয়েছিলেন যে আশিক তাঁকে (সুস্মিতাকে) ব্যাপক মারধর করেছেন।

বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য সুস্মিতার লাশ পাবনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে ইতিমধ্যেই আশিককে ধরার জন্য অভিযান চলছে। শিগগিরই তাঁকে ধরার আশা করছেন ওসি।