আবুধাবির আল শাতি প্রাসাদে বৈঠকের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ছবিটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেনশিয়াল কোর্ট থেকে প্রকাশ করা হয় | ছবি: এএফপি

পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কাশ্মীরসহ আলোচিত সমস্যাগুলোর সমাধানে গুরুত্বের সঙ্গে আন্তরিক আলোচনায় আসতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আর এ ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানকে এক টেবিলে আনতে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডনের খবরে বলা হয়, গতকাল সোমবার দুবাইভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-অ্যারাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাহবাজ এসব কথা বলেন। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, সাক্ষাৎকারটি আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও সম্প্রচার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুই দিনের সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান শাহবাজ।

শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘ভারতীয় নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আমার বার্তা হচ্ছে, আসুন, আমরা টেবিলে বসে কাশ্মীরের মতো আমাদের আলোচিত সমস্যার সমাধানে গুরুত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনা করি। কাশ্মীরে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে দেশটি ২০১৯ সালের আগস্টে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেয়। ‘ভারতে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন’ উল্লেখ করে শাহবাজ বলেন, ভারত অর্থপূর্ণ আলোচনার জন্য প্রস্তুত, বিশ্বকে এই বার্তা দিতে তাদের অবশ্যই এটি বন্ধ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বিশ্বকে মনে করিয়ে দেন, ভারত ও পাকিস্তান প্রতিবেশী দেশ। তাই একে অপরের সঙ্গে থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস ও উন্নতি করব, নাকি একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া করে সময় ও সম্পদের অপচয় করব, সেটি আমাদেরই ঠিক করতে হবে।’

পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। এগুলো কেবল জনগণের জন্য আরও দুর্দশা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব নিয়ে এসেছে। এসব যুদ্ধ থেকে আমরা শিক্ষা পেয়েছি, আমাদের প্রকৃত সমস্যা সমাধান করতে পারলে আমরা শান্তিতে থাকতে পারব। আমরা দারিদ্র্য বিমোচন ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে চাই। আমরা জনগণকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে চাই। বোমা ও গোলাবারুদের পেছনে সম্পদ নষ্ট করতে চাই না। আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে এই বার্তাই দিতে চাই।’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আমাদের প্রচুর অত্যাধুনিক অস্ত্র আছে। আল্লাহ না করুন, যদি একটি যুদ্ধ বেধে যায়, তাহলে কী হয়েছিল, তা বলার জন্য কেউ বেঁচে থাকবে?’

শাহবাজ শরিফ বলেন, সৌদি আরব বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। বহু শতাব্দী ধরেই তাদের সঙ্গে সৌদির ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যা অনন্য।

অতীতের কথা বলতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের জন্ম ও ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে সৌদি আরবের সঙ্গে লাখো মুসলমানের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এবং তাঁরা মক্কা ও মদিনা সফর করতেন।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত লাখ লাখ পাকিস্তানির দ্বিতীয় বাড়ি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই দেশে তাঁর সফর সফল। তিনি বলেন, শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ (বর্তমান প্রেসিডেন্ট) একজন স্নেহপরায়ণ ভাই এবং পাকিস্তানের ঘোর সমর্থক। তিনি পাকিস্তানের জনগণের উন্নতি ও সমৃদ্ধ চেয়েছিলেন। তাঁর বাবা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ আল নাহিয়ানও পাকিস্তানের একজন মহান বন্ধু ছিলেন এবং পাকিস্তান তাঁর হৃদয়ে ছিল।

শাহবাজ বলেন, ‘পাকিস্তান ও উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতৃত্ব বাণিজ্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করেছে। ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে উপস্থাপনের পাশাপাশি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ পরিহার করতে দুই অঞ্চলের নেতারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’