বাগানের প্রায় সব গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ছবিটি রোববার দুপুরে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে রাতের অন্ধকারে এক প্রান্তিক কৃষকের প্রায় ১ হাজার ২০০ ফলন্ত কলাগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের দাবি, পূর্বশত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা কলাগাছগুলো ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলেছে। এতে তাঁর পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

শনিবার রাতের কোনো এক সময় উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর প্রকল্প সীমানাসংলগ্ন পদ্মা নদীর ‘রূপচর কনিকার’ নতুন মৌজায় এ ঘটনা ঘটে। আজ রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে মাঠে এসে ক্ষতির দৃশ্য দেখতে পান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমিরুল বিশ্বাস। 

এরপরই দুপুরে ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেন ওই কৃষক। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করেনি পুলিশ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে চররূপপুর কনিকা মৌজা। পাশেই উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের চররূপপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আমিরুল বিশ্বাসের কলাবাগান। এখানে তিনি প্রায় ছয় একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কলার চাষ করেছিলেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা তাঁর ১ হাজার ২০০ কলাগাছ কেটে নষ্ট করায় তিনি এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছেন। 

মামলার এজাহার ও স্থায়ীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মার চরের ওই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে কলার আবাদ করে আসছিলেন আমিরুল। জমি নিয়ে ওই গ্রামের খায়রুল ইসলাম ও নবাব আলীর সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়। তাঁর ধারণা, পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন কলাগাছ কেটেছে। 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমিরুল বিশ্বাস বলেন, ‘আজ সকালে কলাবাগানে গিয়ে দেখি, বাগানের ২ হাজার কলাগাছের মধ্যে ১ হাজার ২০০ কলাগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কলাগাছে থোড় আসা শুরু করেছিল। এখন আমার মাথায় হাত।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কলাগাছ কাটার খবর পেয়ে সেখানে গেলে ওই এলাকার খায়রুল ইসলাম ও নবাব আলীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জন ব্যক্তি আমার ওপর চড়াও হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।’ 

কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে খায়রুল ইসলাম ও নবাব আলীদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল আমিরুলের। আমিরুল একজন প্রান্তিক চাষি। চাষের ওপর নির্ভরশীল।

বাগানের কেটে ফেলা কলাগাছ দেখাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক আমিরুল বিশ্বাস। ছবিটি রোববার দুপুরে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

চররূপপুর গ্রামের বাসিন্দা দুলাল বিশ্বাস বলেন, ‘মানুষ মানুষের সঙ্গে শত্রুতা করে। কিন্তু গাছের সঙ্গে এ কেমন শত্রুতা? বাগানের গাছ তো কারও সঙ্গে শত্রুতা করেনি। গাছের কোনো অপরাধ নেই। তাহলে কেন এমন করা হলো?’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘এই জমি আগে আমি চাষ করতাম। দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় আমিরুল ইসলামের কাছে ওই জমি বর্গা দিয়ে যাই। দেশে চলে আসায় জমি ফেরত চাইলে আমিরুল ইসলাম তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।’ 

গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করে খায়রুল বলেন, ‘জমি ফেরত চাওয়ায় তিনি নিজেই গাছ কেটে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। ঘটনার দিন আমি এলাকায় ছিলাম না।’ 

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের হাতে পেয়েছি। তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’