ঈশ্বরদী থানার প্রধান ফটক | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: শিশুটির বাড়ি কোথায়, পরিচয় কী এবং কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে? দীর্ঘ চার বছরেও এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। পাবনায় পদ্মা নদীর শাখাতীর থেকে উদ্ধার করা অজ্ঞাতনামা এমন একটি শিশুর লাশের পরিচয় উদ্ধার করতে পুলিশের কপালে রীতিমতো ঘাম ঝরছে।
চার বছর ধরে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ এবং পরে পাবনার সিআইডি পুলিশ পদ্মা নদী তীরবর্তী সব থানাসহ দেশের সব থানায় বহুবার বার্তা পাঠিয়েও আনুমানিক ৭-৮ বছর বয়সের ওই শিশুর লাশের পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি। সর্বশেষ গত বছরের ২০ জুন সিআইডির অপরাধ বিষয়ক গেজেটে (সিআইবি গেজেট) এ হত্যা মামলাটি প্রকাশের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ২০১৯ সালের ২১ জুলাই সকালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের বিলকেদার গ্রাম সংলগ্ন পদ্মার শাখাতীরে একটি শিশুর লাশ ভাসতে দেখে গ্রামবাসীরা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ ওই দিনই শিশুর লাশটি উদ্ধার করে একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তা ডা. মো. কামাল ওসমান রিপোর্টে জানান, শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যার পর পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এতে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, শিশুটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপরই ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী পুলিশ এ ঘটনায় একটি নিয়মিত হত্যা মামলা দায়ের করে।
কিন্তু কারা, কিজন্য শিশুটিকে হত্যা করেছে এবং শিশুটির পরিচয় কী-এ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় পড়ে পুলিশ। এজন্য পাবনার ঈশ্বরদী থেকে লালপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ পদ্মা নদী তীরবর্তী উজানের সব জেলার সব থানায় ঈশ্বরদী পুলিশ বার্তা পাঠায়। কিন্তু এসব জায়গা থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এভাবে এক বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত করে কোনো কূলকিনারা না পেয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে।
আদালত চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ না করে লাশের শনাক্তকরণসহ মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য মামলাটি ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সিআইডি, পাবনা জেলার কাছে ন্যস্ত করেন।
পাবনা সিআইডির পরিদর্শক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা উত্তম কুমার পাল জানান, তারা দায়িত্ব পাবার পরই শিশুটির সুরতহালের বর্ণনা দিয়ে বহুবার সারাদেশের সব থানায় বার্তা পাঠায় যে, এ ধরনের কোনো শিশু নিখোঁজ, হত্যার শিকার বা কোনো জিডি বা মামলা আছে কিনা? কিন্তু এতদিনেও কোনো পজিটিভ ফল পাওয়া যায়নি। পাবনা সিআইডি এ বছরের ২০ জুন সিআইডির অপরাধ বিষয়ক গেজেটে (সিআইবি গেজেট) এ হত্যা মামলাটি প্রকাশের জন্য আবেদন করে।
সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক উত্তম কুমার পাল আরও বলেন, আদালতের নির্দেশের কারণে এই মামলার রহস্য উদঘাটনের বাইরেও শিশুর পরিচয় উদঘাটন করা একটি মানবিক বিষয়ও হিসেবেও বিবেচনা করা বাঞ্ছনীয়। এজন্য আমরা সারা দেশের সঙ্গে সংযোগ করেও কোনো হদিস পাচ্ছি না।
এ মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ঈশ্বরদী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (বর্তমানে নাটোর কোর্ট উপরিদর্শক) শরিফুল ইসলাম বলেন, লাশটি উদ্ধারের পর সব থানায় বার্তা পাঠানো হয়- এ ধরনের কোনো শিশুর নিখোঁজ বা হত্যার শিকার সংক্রান্ত কোনো জিডি বা মামলা আছে কিনা। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এছাড়া কেউ কোনো অভিযোগ বা দাবি নিয়ে আসেনি। এরপরই তদন্ত শেষে আমরা আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করি। তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই মানবিক।