প্রতীকী ছবি |
কূটনৈতিক প্রতিবেদক: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশের মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছেন। মানব পাচারকারীরা বাস্তুচ্যুত এসব মানুষকে ফাঁদে ফেলছেন।
বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে নারী এবং মেয়েশিশুরা পাচার ও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। পাচার ও নিপীড়নের শিকার এসব নারী এবং শিশুদের মধ্যে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁদে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে।
জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধবিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) উদ্যোগে পরিচালিত দ্য গ্লোবাল অ্যাকশন এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন পার্সন অ্যান্ড দা স্মাগ্লিং মাইগ্র্যান্টস-বাংলাদেশ (গ্লো.অ্যাক্ট বাংলাদেশ) প্রকল্পের আওতায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনকে মানব পাচারের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনে মানব পাচার বেড়ে যাওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনে উল্লেখিত বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মানব পাচার একটি আন্তসীমান্ত সমস্যা। তাই এ ধরনের জটিল সংকটের সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই। বিশেষ করে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা তাঁদের অপরাধের ধারায় পরিবর্তন এনেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে মানব পাচারকারীরা লোকজনকে প্রলোভনে ফেলে ফাঁদে জড়িয়ে ফেলছেন। তাই মানব পাচার প্রতিহত করতে হলে আইন, বিধিসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কৌশলগত পরিবর্তন আনার কোনো বিকল্প নেই।
মানব পাচারকারী শুধু যৌন নিপীড়ন নয়, মানব দেহের অঙ্গ পাচারেও যুক্ত বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯-এর পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মন্দায় হতদরিদ্ররা মানব পাচারের ঝুঁকিতে আছেন।
ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি মার্কো টেক্সেরিয়া বলেন, ‘অনলাইনে মানব পাচারের নিয়োগ এবং সাইবার অপরাধের মাধ্যমে মানব পাচারের মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে প্রতিবেদনটিতে। করোনা মহামারিতে এই পরিস্থিতি বেড়েছে। যেখানে মানব পাচারকারীরা আরও প্রযুক্তি-সচেতন হয়ে উঠছেন। তবে সফলভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা মানব পাচারকারীদের শনাক্ত, তদন্ত এবং বিচার করতে পারি।’
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৪১টি দেশের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে মানব পাচারবিষয়ক এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে ইউএনওডিসি। প্রতিবেদন তৈরিতে বিভিন্ন দেশের আদালতের মানব পাচারসংক্রান্ত ৮০০টি মামলার বিশ্লেষণকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। অভিন্ন এই সমস্যা সমাধানের জন্য কোথায় কোথায় নজর দেওয়া দরকার, তা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে করোনা মহামারি মানব পাচারের ঝুঁকি কীভাবে বাড়িয়েছে, সেটা উঠে এসেছে। এর পাশাপাশি মানব পাচারের মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আইওএমের প্রধান আবদুস সাত্তার ইসভ বলেন, অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও নারী ও শিশুর পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত মানুষ মানব পাচারের ঝুঁকিতে আছেন। কোভিড-১৯ মানব পাচারের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। মানব পাচার দমনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ এবং নাগরিক সমাজকে যুক্ত করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।