রাজশাহী নগরের সড়ক বিভাজকগুলো রঙ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নগর ভবনের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী থেকে: রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভা হবে ২৯ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে রাজশাহী বিভাগীয় আওয়ামী লীগ নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যে দলটির সহযোগী সংগঠনগুলো প্রস্তুতি সভা করেছে। নগরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের উন্নয়নের প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। মাইকে করা হচ্ছে প্রচার। নগরের বিভিন্ন সড়কে বসানো হয়েছে তোরণ। ব্যানার-ফেস্টুনে পাল্টে গেছে নগরের চিত্র।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯ জানুয়ারি বিকেলে রাজশাহী নগরের মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে এবং জনসভাকে সফল করতে জানুয়ারির শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ নানা ধরনের প্রস্তুতি সভা করে। দফায় দফায় কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্যরা মাদ্রাসা মাঠ পরিদর্শন করেন। ৫ জানুয়ারি দলটির রাজশাহী মহানগর ও জেলা কমিটি দলীয় সভা করে। বিকেলে মাদ্রাসা মাঠ পরিদর্শন করেন নেতারা। এরপর ১৩ জানুয়ারি দলটি বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা করে। সেখানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আলোচনায় উঠে আসে এবার রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী এলে কিছুই চাওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর জন্য হাত ভরে উন্নয়ন করেছেন, তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানো হবে। ২১ জানুয়ারি রাজশাহী বিভাগীয় যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস (পরশ) বক্তব্য দেন।
এ সফর উপলক্ষে মঙ্গলবার বিশিষ্ট নাগরিক ও সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। জনসভা সফল করতে ও রাজশাহী মহানগরের উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ ও মতামত দেন তাঁরা। একই দিন দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় ছাত্রলীগের প্রতিনিধি সভা হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে এসে ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে ২৮টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী না চাইতে আরও কিছু প্রকল্প ঘোষণা করতে পারেন। কারণ, রাজশাহীতে উন্নয়ন হলেও সেভাবে কর্মসংস্থান এখনো তৈরি হয়নি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন। রাজশাহীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী হাতভরে দিয়েছেন। তাঁরা এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছুই চাইবেন না। তাঁকে রাজশাহীবাসী কৃতজ্ঞতা জানাবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আহ্বানের বক্তব্য শুনতে রাজশাহীতে সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার বলেন, প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে গেছে। প্রচারের অংশ হিসেবে আজ বুধবার বর্ধিত সভা ও উপকমিটির সভা রয়েছে। সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মতো মিছিলও হবে। আগামী শুক্রবার নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে মিছিল হবে। শনিবার স্মরণকালের সবচেয়ে বড় একটি প্রচার মিছিল হবে। সেদিন কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে চলছে প্রচার। রাজশাহী নগরের কুমার পাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন সড়কে সৃষ্ট খানাখন্দ পুনঃসংস্কার করা হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন সড়ক বিভাজকগুলোর সংস্কারকাজও প্রায় শেষ। সড়কের ধারে থাকা গাছগুলোর অতিরিক্ত ডালপালা ছেঁটে ফেলার পাশাপাশি সড়কের ধারে সরকারি বাসভবনগুলোর দেয়ালে করা হচ্ছে নতুন রঙ। নতুন করে লাগানো হচ্ছে সৌন্দর্যবর্ধক লাইট। শহরের সৌন্দর্য দৃষ্টিগোচর করতে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানপাট সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দোকানপাট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সমাবেশের দিনের আগেই সব ধরনের অস্থায়ী দোকান সরানো হবে। রাস্তাঘাট ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
জনসভায় সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাড়াতে নিয়মিতভাবে মাইকিং করে জানান দেওয়া হচ্ছে উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর অবদান। আহ্বান জানানো হচ্ছে জনসভায় যোগ দিতে। এ লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ করছেন নেতা-কর্মীরা। তবে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে গেছে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। সেগুলোয় আছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের স্লোগান। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা পর্যন্ত ব্যানার ফেস্টুন টানিয়েছেন। নগরের রাস্তায় রাস্তায় ঘন ঘন তৈরি করা হয়েছে তোরণ। এসবে রাজশাহী নগরের চিত্র পাল্টে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এমনও অনেক নেতা আছেন, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর ছবি ওপরে ছোট করে দিয়ে নিজের ছবি বড় করে দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন টানিয়েছেন। অনেককে তাঁরা চেনেন না।