যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন | ছবি: রয়টার্স

পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক:  বড় বিতর্কের মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর সাবেক অফিস ও একটি বাড়ি থেকে দফায় দফায় উদ্ধার হচ্ছে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি। এসব ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী পক্ষ রিপাবলিকান দলের নেতারা সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। ছাড় দিচ্ছেন না বাইডেনের নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারাও। খবর পলিটিকোর

গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত মোট তিন দফায় বাইডেনের বাড়ি ও ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে গোপন নথি উদ্ধার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। প্রথম নথি উদ্ধারের ঘটনা ঘটে ওয়াশিংটনে বাইডেনের সাবেক ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে। এরপর ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যে তাঁর একটি বাড়িতে পাওয়া যায় নথির সন্ধান। সবশেষ গত শনিবার একই বাড়ি থেকে আবার গোপন নথি উদ্ধার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন বাইডেন। উদ্ধার হওয়া গোপন নথিগুলো সেই সময়ের। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হলে কেন্দ্রীয় সরকারে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের স্বেচ্ছায় দাপ্তরিক নথি ও গোপন দলিল জমা দিতে হয়। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের মেয়াদ শেষের পরও এসব নথি জমা দেওয়া হয়নি।

শনিবার নথি উদ্ধারের পর গতকাল রোববার ডেমোক্রেটিক পার্টির যেসব রাজনীতিক বাইডেনের সমালোচনা করেছেন, তাঁদের একজন পশ্চিম ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটর জো মানচিন। সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে তিনি বলেছেন, গোপন নথি উদ্ধারের বিষয়ে বাইডেনের অনুশোচনা থাকা উচিত। এর জন্য বাইডেনই দোষী—এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।

নথিগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আরেক ডেমোক্র্যাট নেতা ডিক ডারবিন। ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের এই সিনেটর বলেন, ‘আমি উদ্বিগ্ন। এমনটা যখন কোনো কংগ্রেস সদস্যের সঙ্গে ঘটে, আর গোপন নথির ব্যাপারও জড়িয়ে থাকে, তখন বিষয়টি সামলানোর জন্য আমরা একটি রীতি অনুসরণ করি। এই নথিগুলো এখানে–সেখানে বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে থাকবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

এর আগে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্ট থেকে সরকারি গোপনীয় নথি উদ্ধার করা হয়েছিল। এতে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে বর্তমানে তদন্ত চলছে। তদন্তের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা ট্রাম্পের কাছ থেকে কমপক্ষে ৩২৫টি গোপনীয় নথি জব্দ করেছেন।

এদিকে বাইডেনের সমালোচনা করলেও অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা আবার নথি উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়ি থেকে গোপন নথি জব্দ করার বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ট্রাম্প গোপন নথি নিয়ে যে কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছেন, বাইডেনের ঘটনা ততটা খারাপ নয়।

বলা চলে ডিক ডারবিনের কথাই। বাইডেনের সমালোচনা করলেও তিনি বলেছেন, নথি উদ্ধারের ঘটনায় জো বাইডেন পুরোপুরি সহযোগিতা করেছেন। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর একটি বড় ফারাক রয়েছে। আর ডেলাওয়ারে ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস কুনস বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, এটা এমন কোনো ঘটনা যে মার্কিনদের সারা রাত জাগিয়ে রাখবে।’

বিষয়টি নিয়ে চলতি সপ্তাহেই সংবাদমাধ্যম এবিসির সঙ্গে কথা বলছিলেন ক্রিস কুনস। তাঁর ভাষ্য, বাইডেনের ডেলাওয়ারের বাসা থেকে নতুন করে নথি উদ্ধারের ঘটনায় যে উদ্বেগ দেখানো হচ্ছে, তা বেশি বাড়াবাড়ি। এতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে দেশবাসীর নজর সরে যাচ্ছে।

নথি উদ্ধারের বিষয়ে বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে তফাত তুলে ধরতে গিয়ে ডেলাওয়ারের সিনেটর ক্রিস কুনস বলেন, বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ওই নথিগুলো উদ্ধার ও তদন্তের বিষয়ে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে ট্রাম্পের বাড়ি থেকে যখন এমন নথি উদ্ধার করা হয়েছিল, তখন তিনি বারবার একই দাবি তুলছিলেন যে নথিগুলো কাছে রাখার অধিকার রয়েছে তাঁর।

বর্তমান ও সাবেক এই দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যকার তফাতটা উঠে এসেছে জরিপের হিসাবেও। রোববার এবিসি নিউজে প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে ৩৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে ওই নথিগুলো বাইডেন ঠিকঠাকভাবেই সামলে রেখেছেন। আর ৬৪ শতাংশ মনে করেন, বাইডেন ভুল করেছেন। একই ধরনের একটি জরিপ করা হয়েছিল ট্রাম্পের বাড়ি থেকে নথি উদ্ধারের পর। সেখানে দেখা যায়, ৭৭ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন ট্রাম্প ভুল করেছেন।

এদিকে ডেমোক্র্যাট নেতারা বাইডেনকে অনেকটা ছাড় দিলেও সমালোচনায় এককাট্টা বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির নেতারা। বাইডেনকে ‘গোপন নথি মজুতকারী’ আখ্যা দিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য মাইক টার্নার বলেছেন, এ ঘটনায় চলা তদন্ত দেখে মনে হচ্ছে কিছু আড়াল করার চেষ্টা চলছে।

পরিষদের আরেক রিপাবলিকান সদস্য মাইকেল ম্যাককাউল বলেন, ‘যতক্ষণ না ওই নথিগুলো দেখছি, বলতে পারছি না সেখানে কী আছে। সেখানে শত্রুরাষ্ট্র, বিশেষ করে চীন নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত তথ্যও থাকতে পারে।’ এই ঘটনা আরও বড় হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন এই রাজনীতিবিদ। তাঁর ভাষায়, ‘ওয়াটারগেটও প্রথম দিকে ছোট একটি কেলেঙ্কারি ছিল। তবে পরে কিন্তু তার জেরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।’