ঈশ্বরদীতে ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসী’ দিয়ে প্রতিপক্ষের ১৪০০ কলাগাছ কাটার অভিযোগ

রাস্তার পাশে তিনটি জমিতে কলাগাছ গোড়া ও মাথার কাটা অংশগুলো দেখছেন ভুক্তভোগী এক কৃষক | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রকাশ্যে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কলাগাছ ও শিম খেত কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, জমিজমার ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে শরিকদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়। এরই জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসী’ দিয়ে কলাগাছগুলো ও শিম খেত কেটে ফেলেছে। এতে তাঁদের প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বুধবার দুপুরে উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

বুধবার বিকেলে ঈশ্বরদী শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে মুলাডুলির বেতবাড়িয়া গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামীণ পাকা রাস্তার পাশ থেকে জমির তিনটি স্পটে কলাগাছের গোড়া ও মাথার কাটা অংশগুলো পড়ে আছে। পাশে অন্য একটি জমিতে শিমের গাছের গোড়া কেটে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের কয়েকজন নারী-পুরুষকে কলা বাগানের এই ক্ষতির কষ্টে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। 

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে রয়েছেন-আমিনুদ্দিন, ইমান উদ্দিন, একাব্বর প্রামাণিক, শের আলী ও নাদের আলী। এ সময় তাঁরা অভিযোগ করেন, গ্রামে তাঁদের কয়েক শরিকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের কিছু লোকজন শহর থেকে ভাড়া করা অপরিচিত যুবকদের এনে সন্ত্রাসী কায়দায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কলাগাছগুলো কেটে দিয়েছে। বাধা দিতে গেলে অচেনা যুবকেরা তাঁদের হুমকি দেয়। 

তাঁরা জানান, বিষয়টি থানায় জানিয়েছেন। এ নিয়ে মামলা করবেন তাঁরা। 

ভুক্তভোগী নাদের আলী প্রামানিক বলেন, ‘ঘটনার সময় পুরুষেরা বাড়িতে ছিল না। এই সুযোগে বাইরে থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে কয়েকটি বাড়ির ওপর হামলা এবং নারীদের হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় দু-একজনকে মারধরও করে তারা। এতে গ্রামের মানুষ ভয় পেয়ে যায়। বাধা দিতে গেলে তারা হুমকি দেয় এবং প্রকাশ্যে গাছগুলো কেটে ফেলে। এই জমির মালিকানা নিয়ে ফজলুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে।’ 

এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, ‘বেশ কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলে এসে কলাগাছগুলো কেটে দিয়ে গেল। এতে আমরা ভীষণভাবে ভয় পেয়ে যাই।’ 

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি প্রতিপক্ষের ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা’ প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে গাছগুলো কেটে ফেলে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মিঠু উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘কেউ এভাবে প্রকাশ্যে জোর করে গাছ কেটে ফেলতে পারেন না। এটি হত্যাকাণ্ড। আমরা বিচার চাই।’ 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ফারুক হোসেনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে মুলাডুলির সাবেক ইউপি সদস্য আবু বকর সরদারের ছেলে মিজানুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এরই জেরে বুধবার দুপুরে মিজানুর রহমানের ভাই ফজলুর রহমান, পরিবারের অন্য সদস্য এবং বাইরের ভাড়াটে আরও ৩৫-৪০ জন সন্ত্রাসীদের ডেকে আনে। এরপর প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কলাগাছ কেটে ফেলে। বাধা দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে আমরা পুলিশের ৯৯৯ নম্বরের কল দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।’ 

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের জমিতে কলার গাছ লাগিয়েছিলাম। তারা ওই গাছের মালিকানা দাবি করেন কীভাবে?’ 

কাটা কলাগাছ নিয়ে কান্না করছেন একজন ভুক্তভোগী কৃষক | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব গোস্বামী বলেন, ‘আমি এইমাত্র ঘটনাটি শুনলাম। তবে আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগ এলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাদিউল ইসলাম বলেন, ‘বিকেল পর্যন্ত আমাকে এ বিষয়ে কেউ কিছু জানাননি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে থানা-পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ 

সন্ধ্যায় ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, ‘জরুরি সেবায় কল পেয়ে পুলিশের মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে গেলে পরিবেশ শান্ত হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’