কারাগার পার্ট–২ সিরিজে দ্বৈত চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী ছবি: হইচই

বিনোদন প্রতিবেদক: ইদানীং কিছু অদ্ভুত সমস্যা হচ্ছে চঞ্চল চৌধুরীর। শুটিংয়ে যাওয়ার আগের রাত থেকে কানে কম শুনছেন। হয়তো স্ত্রী বা সন্তান কোনো দরকারি কথা বললেন, কিন্তু চঞ্চল এতটাই চরিত্রের গভীরে ডুবে আছেন; শুনতেই পাচ্ছেন না। আর স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে পড়ছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে রাখার ক্ষমতা কিছু লোপ পায় এটা সত্যি, কিন্তু চঞ্চলের এই ভুলে যাওয়ার প্রবণতার বড় কারণ—চরিত্র নিয়ে ভাবনা।

অভিনেতা বলছেন, ‘আমার তো চিন্তা, কাল সকালে উঠে যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াব, চরিত্রটি আসলে কতটুকু ধারণ করতে পারব। ঘরের ভেতর ঘুরছি-ফিরছি, কিন্তু যে কাজ আমি করতে যাই, সেটা সব সময় মাথার ভেতর চলছে। স্ত্রী-সন্তান হয়তো এক কথা পাঁচবার বলল, কিন্তু কিছু মনে রাখতে পারছি না। এ কারণে তাঁদের ধমক খেতে হচ্ছে।’

গল্প নিয়ে, চরিত্র নিয়ে ভাবনা চঞ্চলের যে আগে হতো না, তা নয়। তবে ইদানীং সেটা বেড়েছে। আর বেড়েছে কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। শিল্পী হিসেবে চঞ্চল সব সময় সেই দলে, যাঁরা বিশ্বাস করেন, শিল্পের হাত ধরে এগিয়ে চলে সমাজ। একজন শিল্পী তাই সময়ের কথা বলেন, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন সমস্ত অসংগতি। ফলে এই যে এখন চঞ্চলকে নিয়ে এত মাতামাতি হচ্ছে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গজুড়ে, তাতে মোটেই গা ভাসাচ্ছেন না চঞ্চল। উপভোগ হয়তো করছেন, তবে উদ্‌যাপন করছেন না। জনপ্রিয়তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না। দর্শকদের কাছে তিনি তারকা হতে চান না, তাঁদের সামনে নিজের কাজ নিয়ে সারা জীবন নিবেদনের ভঙ্গিতেই থাকতে চান।

দিন গড়াচ্ছে, আর তার বরং সংশয় বাড়ছে। ‘হাওয়া’ গেল, ‘কারাগার ২’ আসছে; কিন্তু এরপর কী! কোন চরিত্রটির সঙ্গে হবে তাঁর যাপন!

চঞ্চলের মতে, একজন অভিনেতাকে সব সময় কাদামাটির মতো হয়ে থাকতে হয়। মনকে রাখতে হয় ভেজা তুলোর মতো। চরিত্রের ইমোশনের সঙ্গে যাতে অভিনেতা মিশে যেতে পারেন সহজে। কিন্তু যত সহজ করে বলা হলো ততটা সহজ নয় বিষয়টি। চারপাশের অস্থিরতা, নিত্যদিনের ঘটনাপ্রবাহ মনকে কঠিন করে ফেলে। চঞ্চল তাই ইদানীং অদরকারি অনেক কিছু এড়িয়ে যান ইচ্ছাকৃতভাবে।শুটিংস্পটে হয়তো দুটো দৃশ্যের মাঝে একটু বিরতি পেলেন, ঘুমিয়ে যান সঙ্গে সঙ্গে। যাতে আশপাশের আলাপ তাঁর মনোযোগ না কেড়ে নেয়।

একই কায়দা চঞ্চল প্রয়োগ করেছেন ‘কারাগার’-এর শুটিংয়ের ক্ষেত্রেও। সিরিজের প্রথম সিজন সবাইকে যেভাবে রহস্যের গভীরে ডুবিয়ে রেখেছে, সেই রহস্য ভেদ করতে হইচইয়ে আসছে দ্বিতীয় সিজন। ২২ ডিসেম্বর সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। চঞ্চল জানাচ্ছেন, শুটিংয়ের সময় যতটা না ইমোশনাল ছিলেন, ডাবিংয়ের সময় ইমোশনাল হয়েছিলেন শত গুণ বেশি। ডাবিংয়ের পর হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়েছিলেন স্টুডিও থেকে। চঞ্চল বলছেন, ‘গল্প নিয়ে তো কিছু বলা যাবে না। তবে কারাগার যাঁরা দেখেছেন কিংবা দেখবেন, দেখার পর আপনাদের মনে হবে, কেন এই গল্প এত দিন হয়নি। এত বছর কেন দেরি হলো!’