রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপির  ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিশেষ প্রতিবেদক: সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি রাষ্ট্রকাঠামো ‘মেরামতের’ যে রূপরেখা দিয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বিএনপির দেওয়া রূপরেখার ২৭ দফা নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। ভালোভাবে দেখে–বুঝে প্রতিক্রিয়া জানাবে দলটি। ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে, এগুলো ‘কথার কথা’। নাগরিক ঐক্য ও গণসংহতি আন্দোলন অবশ্য বিএনপির রূপরেখাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে। আর লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, রূপরেখায় নতুন কিছু না থাকলেও এগুলো বিএনপির ‘মনের কথা’ হিসেবেই ভাবতে চান।

বিএনপি গতকাল সোমবার যে রূপরেখা ঘোষণা করেছে, তাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনাসহ ২৭টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক গত রাতে বলেন, প্রস্তাবগুলো দেখেননি। এগুলো দেখে–বুঝে প্রতিক্রিয়া মঙ্গলবার প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

বিএনপির দেওয়া রূপরেখার প্রস্তাবগুলো পুরোপুরি দেখেননি বলে জানান বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, পঁচাত্তর–পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রের সংস্কার করতে গিয়ে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়েছিলেন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন। এবারও এ রকম কিছু হলে তা বিপজ্জনক হবে।

মেনন বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার যে কথা এখন বলা হচ্ছে, সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী–সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির সদস্য হিসেবে একই প্রস্তাব তখন তিনি দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিএনপি সবচেয়ে বেশি তৎপর ছিল এবং সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। তাঁর ধারণা, বিএনপির প্রস্তাবের বেশির ভাগই ‘কথার কথা’। রাষ্ট্র সংস্কার নয়, বরং তারা (বিএনপি) যে ‘রেইনবো নেশন’ করতে চায়, তার মধ্য দিয়ে জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রকে পাল্টে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপি জনগণের সামনে যে রূপরেখা ঘোষণা করেছে, সেটিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে একমত হওয়া সাতটি দল ও সংগঠনের জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চের’ এই নেতা বলেন, রূপরেখা বিচার–বিশ্লেষণের দায়িত্ব জনগণের।

‘গণতন্ত্র মঞ্চের’ আরেক নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বিএনপির দেওয়া রূপরেখার বিষয়ে বলেন, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান করতে হলে সরকার এবং শাসনব্যবস্থা উভয়েরই পরিবর্তন দরকার। বিএনপির মতো বড় দল যখন রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রস্তাব হাজির করে, তখন এটি রাজনীতিতে প্রধান আলোচ্য হয়ে যায়। এটি রাজনীতির জন্য ইতিবাচক।

তবে বিএনপি যেসব সংস্কারের কথা বলেছে, সেগুলো নতুন কিছু নয় বলেই মনে করেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় হলো দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকলে আইন করেও এসব করা সম্ভব নয়। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা কী করেছে? আসলে রাজনৈতিক দলগুলো এখন যেভাবে চলছে, তাতে যতই ভালো কথা বলা হোক না কেন, কোনো কাজ হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও কিন্তু নানা সংস্কারের কথা উঠেছিল। তখন বিএনপি নিজেদের ভুক্তভোগী ভেবেছিল। আসলে ক্ষমতায় গেলে এক কথা, ক্ষমতার বাইরে থাকলে আরেক কথা হয়। সুতরাং এসব নিয়ে খুব আহ্লাদিত হওয়ার কিছু নেই। তারপরও আশা করব, দেরিতে হলেও এগুলো বিএনপির মনের কথা।’