তারানেহ আলিদুস্তি | ফাইল ছবি: রয়টার্স
পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: ইরানে তিন মাস ধরে চলা বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ায় এক খ্যাতিমান অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ইরানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। খবর এএফপির।
গ্রেপ্তার অভিনেত্রীর নাম তারানেহ আলিদুস্তি (৩৮)। ২০১৬ সালে অস্কারজয়ী ‘দ্য সেলসম্যান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুয়া ও বিকৃত আধেয় (কনটেন্ট) প্রকাশের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা উসকে দেওয়ার অভিযোগে তারানেহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তারানেহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবশেষ পোস্ট দিয়েছেন ৮ ডিসেম্বর। একই দিন ইরানি কর্তৃপক্ষ সরকারবিরোধী বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে মোহসেন শেকারি নামের ২৩ বছর বয়সী এক তরুণের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
৮ ডিসেম্বর নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি ছবি শেয়ার করেছিলেন তারানেহ। তিনি লিখেছিলেন, ‘আপনাদের নীরব থাকার মানে হলো, দমন–পীড়ন ও দমন-পীড়নকারীদের সমর্থন করা।’
পোস্টের ক্যাপশনে তারানেহ লিখেছিলেন: ‘যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা এই রক্তপাতের ঘটনা দেখছে, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, এর অর্থ দাঁড়ায়, মানবতার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন।’
কৈশোর থেকেই ইরানি চলচ্চিত্রে কাজ করছেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি তিনি ‘লিলাস ব্রাদারস’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি প্রদর্শন করা হয়।
কঠোর পর্দাবিধি মেনে হিজাব না পরার অভিযোগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের রাজধানী তেহরানে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনিকে (২২) গ্রেপ্তার করে নীতি পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।
নির্যাতনে মাসার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে ইরানের মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। মাসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। চলমান বিক্ষোভকে ‘দাঙ্গা’ বলে অভিহিত করে দমন–পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে ইরানের কর্তৃপক্ষ।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ইরানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তিন শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন হাজারো ব্যক্তি। এ ছাড়া বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
মাসার মৃত্যুর দিনই অভিনেত্রী তারানেহ তাঁর ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: ‘এই বন্দীত্ব নরকের মতো।’
ইনস্টাগ্রাম পোস্টে দেওয়া ক্যাপশনে তারানেহ লেখেন, ইরানের নারীরা কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা ভুলে যাবেন না।
মানুষকে সব জায়গায় মাসার নাম ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেছিলেন, মাসার নাম বলুন, বিশ্বে ছড়িয়ে দিন।
৯ নভেম্বর তারানেহ নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। ছবিতে দেখা যায়, তাঁর মাথায় হিজাব নেই। তাঁর হাতে থাকা একটি কাগজে লেখা, ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা।’ এটি চলমান বিক্ষোভের প্রধান স্লোগান।
শেকারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ১২ ডিসেম্বর মাজিদরেজা রাহনাভার্দ নামের ২৩ বছর বয়সী আরও এক বিক্ষোভকারীর ফাঁসি কার্যকর করে ইরান।
বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার আরও ৯ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইরান।
গত মঙ্গলবার ইরানের বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে ৪০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কারও কারও সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হয়েছে।