মরক্কোকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্স | ছবি: রয়টার্স

খেলা ডেস্ক: দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা সময় চেষ্টা করেও যা করতে পারেনি মরক্কো, বদলি হিসেবে মাঠে নামার ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে সেই তা করে ফেললেন ফ্রান্সের রান্দাল কোলো মুয়ানি। উসমান দেম্বেলের বদলি হিসেবে মাঠে নেমেই গোল পেয়ে গেলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড। কিলিয়ান এমবাপ্পের শট মরক্কোর এক খেলোয়াড়ের শরীরে বাঁধা পেলেও চলে যায় ডান পাশে ফাঁকায় দাড়ানো মুয়ানির কাছে। ঠাণ্ডা মাথায় ফ্রান্সের জার্সিতে প্রথম গোলটি করতে ভুল করেননি মাত্রই চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নামা মুয়ানি।

আর এই গোলেই নিশ্চিত হয়ে যায় টানা দ্বিতীয়বার ফ্রান্সের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠা। লুসাইল স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের চমক মরক্কোর ২–০ গোলে হারিয়ে ৬০ বছরের মধ্যে প্রথম দল হিসেবে টানা দুবার বিশ্বকাপ জয়ে খুব কাছে চলে গেলো ফরাসিরা। আগামী রোববার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফাইনালে কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্স সেই কীর্তি গড়তে মাঠে নামবে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। এমবাপ্পে অবশ্য কাল গোল পাননি। মুয়ানির আগে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের প্রথম গোলটি থিও এরনান্দেজের। 

সেমিফাইনালের আগে মাত্র একটি গোল খাওয়া মরক্কোর দুর্ভেদ্য রক্ষণ দুর্গ জয় করতে মাত্র ৫ মিনিট লাগে ফ্রান্সের। গোলের উৎস সেই আঁতোয়ান গ্রিজমান। ডান প্রান্ত থেকে মরোক্কান ডিফেন্ডার জাওয়াদ আল ইয়ামিককে ফাঁকি দিয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ক্রস বাড়ান ফরাসি ফরোয়ার্ড। প্রথম শটটা মরোক্কান রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের গায়ে লেগে ফেরত আসে এমবাপ্পের কাছে। ফিরতি শট আরেক ডিফেন্ডারে শরীরে লেগে চলে যায় বাঁ পাশে প্রায় ফাঁকায় দাড়ানো থিও এরনান্দেজের কাছে। বাঁ পায়ের দারুণ এক ভলিতে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ও জাতীয় দলের জার্সিতে দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যান ফ্রান্স ডিফেন্ডার।

মিনিট পাঁচেক পরেই সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। মিডফিল্ডার আজেদিন উনাহির ২৫ গজি শট বাঁয়ে ঝাপিয়ে রুখে দেন ফ্রান্স অধিনায়ক উগো লরিস। ১৭তম মিনিটে আবার সুযোগ নষ্ট মরক্কোর। এবার আর লরিসের পরীক্ষা নিতে পারেননি হাকিম জিয়েশ। ডান প্রা্ন্ত দিয়ে এগিয়ে যাওয়া চেলসি তারকার শট চলে যায় বাইরে।

জিয়েশ সুযোগ নষ্ট করতে না করতেই ব্যবধানটা দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিল ফরাসিরা। একটা লং পাস ধরে অলিভিয়ের জিরুর নেওয়া হাফ ভলি প্রতিহত হয় সাইড বারে।

এর মিনিট চারেক পরেই জিয়েশের হাতে অধিনায়কের বাহুবন্ধনী দিয়ে মাঠ ছাড়েন চোটের সঙ্গে লড়া অধিনায়ক রোমেইন সাইস। কোয়ার্টার ফাইনালে পাওয়া চোটটাই মাঠ ছাড়তে বাধ্য করে তাঁকে। ম্যাচ শুরুর ঠিক আগেও চোটের কাছে হার মেনে একাদশ থেকে নাম প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন মরক্কোর আরেক খেলোয়াড় নায়েফ আগুয়ের্দ।

২১ মিনিটের মধ্যেই মূল দুই খেলোয়াড়কে হারিয়ে ফেলা মরক্কোকে ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে ফেলার সুযোগ ফরাসি পেয়ে গিয়েছিল মিনিট ১৫ পরেই। এমবাপ্পে ও জিরু কী করে যেন সেই সুযোগ নষ্ট করলেন । অরেলিয়েঁ চুয়ামেনির চুলচেরা পাস মরক্কোর বক্সে খুঁজে নেয় এমবাপ্পেকে। মরক্কো গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনুকে ফাঁকি দিতে পারলেও এল ইয়ামিক ফিরিয়ে দেন সেই শট। ফরাসিরা একটু পরেই বলের দখল পেলেও জিরুর ১২ গজি শট চলের যায় বাইরে।

এই ব্যর্থতার মাশুল প্রথমার্ধেই গুনতে বসেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ফ্রান্সকে চেপে ধরে মরোক্কানরা। ৪৪ মিনিটে কাতার বিশ্বকাপের সেরা গোলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অল্পের জন্যই নাম লেখাতে পারেননি এল ইয়ামিক! জিয়েশের কর্নার ফ্রান্স গোলরক্ষকের হাত ঘুরে চলে যায় পেনাল্টি বক্সের মাথায় দাঁড়ানো মরোক্কান ডিফেন্ডার কাছে। পুরো শরীর শূন্যে ভাসিয়ে অ্যাক্রোবেটিক ভঙিতে ওভারহেড কিক নিলেন ইয়ামিক। পুরো শরীর ডানে ভাসানো লরিসের হাতের হালকা ছোঁয়া লেগে বারে লাগল বল।

বিরতির পরও বারবার চ্যাম্পিয়নদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে মরক্কো। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিট বল তো ছিল ফ্রান্সের সীমানাতেই। এক আক্রমণেই একাধিকবার গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি মরোক্কানরা। ৫৪তম মিনিটের সেই আক্রমণে একবার রাফায়েল ভারান ও আরেকবার ইব্রাহিমা কোনাতে রক্ষা করেন ফ্রান্সকে। দু মিনিট পর আবার গোলের সুযোগ মরক্কোর, এবার আক্রমণ ছেড়ে রক্ষণে দলকে বাঁচান গ্রিজমান। ৭৫ মিনিটেও দারুণ এক সুযোগ নষ্ট করে মরক্কো্। এবারও সময়মতো শট নিতে পারেনি দলটি।

এ সব সুযোগ হারানোর আক্ষেপ নিয়েই শেষ পর্যন্ত ফাইনাল খেলার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছে অ্যাটলাসের সিংহদের।