ব্রাজিল কোচ তিতে | ছবি: রয়টার্স |
উৎপল শুভ্র, দোহা: সেই রাতে তিতের নাচ যদি কোনো কারণে মিস করে থাকেন, মন খারাপ করার কিছু নেই। মোটামুটি নিশ্চিত থাকতে পারেন, তিতে আজ রাতেও নাচবেন। ‘মোটামুটি’ কথাটা রাখতে হচ্ছে; কারণ, তিতের নাচ দেখতে পাওয়ার একটা শর্ত আছে। ব্রাজিলকে গোল করতে হবে। সেই গোল আবার তিতে ম্যাচের শুরুতেই চান, যাতে ব্রাজিল মন খুলে খেলতে পারে। যেমন খেলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ওই নাচের ম্যাচে।
বিশ্বকাপ ফুটবলের এই পর্যায়ে এসে আলোচিত ঘটনার অভাব থাকে না। মরক্কোর বিস্ময়কর উত্থান, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নামে সূর্যের অস্তাচলে ঢলে পড়ার ইঙ্গিত, সম্ভবত এই বিশ্বকাপের প্রথম হাই-অকটেন ম্যাচ আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস আরেকটি কোয়ার্টার ফাইনাল—তালিকাটা চাইলে আরও লম্বা করা যায়। তিতের নাচও যোগ করে নিন এর সঙ্গে।
দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ কোরিয়াকে নাচতে নাচতে উড়িয়ে দেওয়ার ওই ম্যাচে নেইমার-রিচার্লিসনদের সঙ্গে নেচেছেন ব্রাজিলের কোচ তিতেও। অন্য অর্থ হতে পারে ভেবেই ম্যাচ শেষে বলে দিয়েছিলেন, এটাকে যেন কেউ আবার প্রতিপক্ষের প্রতি অসম্মান মনে না করে বসেন। বললে কী হবে, রয় কিনের মতো কারও কারও ঠিক তা-ই মনে হয়েছে। তিতে নাকি ভারি অন্যায় কাজ করে ফেলেছেন।
এর পর থেকেই পক্ষে-বিপক্ষে কথা হচ্ছে। এতটাই যে কোয়ার্টার ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে বাকি সব ছাপিয়ে কিনা তিতের নাচ! দুই দলের সংবাদ সম্মেলনে শুধু এই একটা প্রশ্নই তো কমন পাওয়া গেল। প্রসঙ্গটা যে উঠবে, তিতে মনে হয় জানতেন। কণ্ঠে তীব্র শ্লেষ ফুটিয়ে তুলে বললেন, যারা এসব বলছে, তারা ব্রাজিলের সংস্কৃতি সম্পর্কে কিচ্ছু জানে না, ব্রাজিলের ইতিহাস জানে না। এদের নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না।
জ্লাতকো দালিচ এই দলে পড়েন না। ব্রাজিলের সংস্কৃতি তাঁর জানা। ক্রোয়েশিয়ার কোচ তাই তিতের নাচে কোনো সমস্যা দেখেন না। তিতের নাচ নিয়ে শুধু প্রতিক্রিয়াই নয়, দালিচকে সরাসরিই প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনিও এমন নাচবেন কি না। দালিচ জানিয়ে দিলেন, না, তিনি নাচবেন না। নাচটা ব্রাজিলিয়ান সংস্কৃতির অংশ, ক্রোয়েশিয়ার নয়।
নাচতে চাইলেও দালিচ সেই সুযোগ পেতেন কি না, এ নিয়ে অবশ্য ঘোর সংশয় আছে। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া আন্ডারডগ হিসেবে শুরু করবে, এটা বলার মতো কিছু নয়। যা বলার মতো, তা হলো ক্রোয়েশিয়া যেন কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পেরেই তৃপ্ত। ক্রোয়েশিয়ার যে সাংবাদিকের সঙ্গেই কথা বলি, সবার কণ্ঠে একই সুর। এই দলটা যা করেছে, তাতেই দেশের মানুষ খুব খুশি। এরপর যদি কিছু পাওয়া যায়, তা বোনাস।
গত বিশ্বকাপেই রানার্সআপ হয়েছে যে দল, তারা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেই খুশি হবে কেন? কারণ, ২০১৮ সালের ক্রোয়েশিয়া আর এবারের ক্রোয়েশিয়ায় অনেক পার্থক্য। সেবারের মাত্র ছয়জনই আছেন এই বিশ্বকাপে। দালিচের কথাতেও তাই তৃপ্তির সুর, ‘ব্রাজিলের বিপক্ষে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল—এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে? আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। জিতলে ভালো, না জিতলেও বলব, আমরা ভালোই করেছি। নতুন এই দল নিয়ে বিশ্বের অষ্টম সেরা দল হতে পেরেছি, এটাও কম কথা নাকি!’
গতবারের ক্রোয়েশিয়া আর এই ক্রোয়েশিয়ার পার্থক্য যিনি সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন, তিনিও এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। এই দলের সবচেয়ে বড় তারকা তো বটেই, তর্কযোগ্যভাবে সে দেশের ফুটবল ইতিহাসেরই সেরা খেলোয়াড়।
সেই লুকা মদরিচও ব্রাজিলকে নির্দ্বিধায় ফেবারিট বলে মেনে নিচ্ছেন, ‘ব্রাজিল সব সময়ই ফেবারিট। এই বিশ্বকাপে যেভাবে খেলছে, তাতে আরও বেশি। আমরা তো ব্রাজিলকে কখনোই হারাতে পারিনি।’ মাঠে নামার আগেই আত্মসমর্পণ হয়ে যায় কি না, ভেবেই হয়তো এরপর যোগ করে দিলেন, ‘তবে ফেবারিটরাও তো হারে।’
ব্রাজিল এই ম্যাচে তর্কাতীত ফেবারিট। ক্রোয়েশিয়া যা পাওয়ার পেয়ে গেছে। জমজমাট একটা ম্যাচের আদর্শ রেসিপিই মনে হচ্ছে এটিকে।