রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রণোদনার প্রস্তাব দেওয়ার সুপারিশ সংসদীয় কমিটির

দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বৈদেশিক কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স | ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ এবং প্রবাস আয় (রেমিট্যান্স) বাড়াতে সরকারি চ্যানেলে টাকা পাঠানোর সুবিধার জন্য প্রবাসীদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর জন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়। বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রণোদনা দেওয়ার পরও বিদেশ থেকে বৈধ পথ বা ব্যাংকিং চ্যানেল বাদ দিয়ে হুন্ডিতে কেন প্রবাসীরা টাকা পাঠান, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে কমিটির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এর কয়েকটি কারণ আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেসব এলাকায় শ্রমিকেরা থাকেন, সেখান থেকে ব্যাংক অনেক দূরে। যাতায়াতে অনেক সময় চলে যায়। অন্যদিকে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা শ্রমিকদের কাছে গিয়ে টাকা নিয়ে আসেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা বেতন পাওয়ার আগেই হুন্ডি ব্যবসায়ীরা নিজেদের পকেট থেকে টাকা শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আবার ব্যাংক ও হুন্ডিতে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার দামেও তারতম্য হয়।

মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মতো একধরনের অ্যাপ ব্যবহার করছেন হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। বিদেশে অনেক দোকানে বাইরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিজ্ঞাপন থাকে কিন্তু ভেতরে আসলে হুন্ডি ব্যবসা করা হয়। এই অ্যাপটি নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন।

বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈধ পথে প্রবাসীদের টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করা এবং প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলের কাছাকাছি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কোনো মানি এক্সচেঞ্জ স্থাপন করা যায় কি না, তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠকে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসের প্রতি মাসে ৭০ থেকে ৯০ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত জুলাই মাসে ৭৩ হাজার ৯৭১ জন, আগস্টে ৯১ হাজার ৩৮৮ জন, সেপ্টেম্বরে ৮৮ হাজার ৩০৪ জন, অক্টোবরে ৭৫ হাজার ২ জন এবং নভেম্বরে (২৪ নভেম্বর পর্যন্ত) ৬৩ হাজার ৬০৬ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। এদিকে সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেলের মাধ্যমে জুলাই মাসে ১ হাজার ২১৯ জন, আগস্ট মাসে এক হাজার ৪৫৯ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ১৭৩ জন, অক্টোবর মাসে ১ হাজার ১১৬ জন ও নভেম্বর মাসে ১ হাজার ২৪৮ জন বৈদেশিক কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের ধীরগতির কারণ তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, মালয়েশিয়া হাইকমিশন থেকে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১৩৬ জনের সত্যায়ন করা হয়ে থাকে। গত ২৪ জুলাই থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার ২২৯ জন কর্মীর সত্যায়ন করা হয়েছে। সত্যায়নের অপেক্ষায় আছে ২৬ হাজার ৫৯১ জন নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত চাহিদাপত্র। রিক্রুটিং এজেন্টদের আবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ অনুমতি দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৯ জনের। বর্তমানে ১১টি আবেদনের বিপরীতে ১ হাজার ৮১২ জনের নিয়োগ অনুমতি অপেক্ষায় আছে। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএমইটি থেকে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার ৯৮৬ জনের। বিএমইটিতে কোনো অনিষ্পন্ন আবেদন নেই।

ধারণা করা হয়, এজেন্ট ও মালয়েশিয়া প্রান্তের কারণে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার ধীরগতির প্রধান কারণ। এজেন্সিগুলো কর্মী পাঠাতে টাকা বেশি নিচ্ছে বলেও বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে।

কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, মোয়াজ্জেম হোসেন, মৃণাল কান্তি দাস, পংকজ নাথ ও হাবিবুর রহমান বৈঠকে অংশ নেন।