কক্সবাজার সৈকত তীরে নৌকার আদলে নির্মিত আওয়ামী লীগের জনসভা মঞ্চ। মঙ্গলবার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টের কাছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশের খোলা মাঠে নৌকার আদলে তৈরি হয়েছে উত্তরমুখী বিশাল সভামঞ্চ। আগামীকাল বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে এই মঞ্চে বসে জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জনসভার আয়োজক কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ। সংগঠনের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান আশা করছেন, শেখ হাসিনার বিশাল এই জনসভায় পাঁচ থেকে সাত লাখ লোকের সমাগম হবে। ইতিমধ্যে দূরের উপকূলীয় এলাকা ও সাগরদ্বীপ থেকে লোকজন শহরে আসতে শুরু করেছেন।

শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জনসভাস্থলের সামনে, আশপাশের সড়ক ও শহরের হলিডে মোড় থেকে কলাতলীর হাঙ্গর ভাস্কর্য মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কে অন্তত ১৮০টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কদ্বীপে সারিবদ্ধভাবে বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে প্রায় দেড় হাজার। তা ছাড়া সড়কের দুই পাশে টাঙানো হয়েছে কয়েক শ বড় বিলবোর্ড ও ব্যানার। স্থানীয় সংসদ সদস্য, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা নিজেদের ছবিসংবলিত এসব বিলবোর্ড, পোস্টার, ফ্যাস্টুন, ব্যানার টাঙিয়েছেন।

কলাতলী সড়কের হোটেল–মোটেল জোন অচেনা হয়ে গেছে শহরের অটোরিকশাচালক মনজুর আলমের (৫৫) কাছে। তিনি বলেন, সড়কজুড়ে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা-স্বাগত জানিয়ে ব্যানার, বিলবোর্ড, ফ্যাস্টুন আর ফ্যাস্টুন। এসবের আড়ালে ঢাকা পড়ছে হোটেল–মোটেল। তবে সাজ সাজ অবস্থা কারও কারও কাছে সুন্দরও লাগতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হোটেলমালিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে সড়ক দিয়ে জনসভাস্থলে যাবেন, সেখানেই দলীয় নেতা–কর্মীরা ব্যানার, ফ্যাস্টুন, তোরণ, বিলবোর্ড টাঙিয়েছেন নিজেদের ইচ্ছেমতো। উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়া। অথচ শহরের প্রধান সড়কের লালদিঘীর পাড়, বাজারঘাটা, গোলদিঘীর পাড়, বাসটার্মিনাল এলাকায় এত তোরণ, ব্যানার, ফ্যাস্টুন চোখে পড়ে না।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে আসছেন। শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন। শেখ হাসিনাকে দেখতে ছুটে আসছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ। তাতে নেতা–কর্মীরাও উজ্জীবিত, উৎফুল্ল। দলের প্রধান শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে নেতা–কর্মী, জনপ্রতিনিধি, সংসদ সদস্যরা কলাতলী সড়কের এত তোরণ, ব্যানার, বিলবোর্ড লাগিয়েছেন, তাতে জনগণও উৎসাহিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে শহরে আনন্দমিছিল করেছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন।

জনসভায় কক্সবাজার শহর থেকেই অন্তত ৫০ হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছেন উল্লেখ করে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম বলেন, শহরের ১২টি ওয়ার্ডে কয়েক দিন ধরে তৎপরতা চালিয়েছেন দলের কয়েক শ নেতা–কর্মী।

সাগরদ্বীপ মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা থেকেও লোকজন কক্সবাজারে আসছেন কাঠের ট্রলার ও স্পিডবোট দিয়ে। মহেশখালী থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ শহরে এসে পৌঁছেছেন বলে জানান কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে সাগর চ্যানেল পাড়ি দিয়ে লাখ লাখ মানুষ জনসভায় আসতে চাইছেন। কিন্তু নৌকা ও স্পিডবোট–সংকট রয়েছে। মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল, সোনাদিয়ায় পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্রসহ বাস্তবায়নাধীন নানা প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর দান উল্লেখ করে আশেক উল্লাহ বলেন, কৃতজ্ঞতা জানাতেই মহেশখালীর মানুষ জনসভাতে আসছেন।

কক্সবাজারের জনসভায় পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার এবারের কক্সবাজার সফর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জনসমাবেশ থেকে কক্সবাজারের উন্নয়নে নতুন প্রকল্প ঘোষণার পাশাপাশি দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু বলতে পারেন।

পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ৬ মে এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের দলীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, গত ১৪ বছরে সরকার কক্সবাজারে ৪০টির বেশি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ এখন দৃশ্যমান।