শীত মৌসুমের শুরুতে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে মৌচাক। সম্প্রতি আমিলাপাড়া গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি চকরিয়া: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শতাধিক মৌচাক দেখা গেছে। শীতের মৌসুমের শুরুতে গ্রামের গাছে গাছে এসব মৌচাক দেখতে ভিড় করছে মানুষ। দেড় মাস ধরে এসব চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন স্থানীয় লোকজন। এতে তাঁদের বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনুকূল পরিবেশ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ইউনিয়ন ‘মধুপল্লি’ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজাখালী ইউনিয়নের আমিলাপাড়া, পালাকাটা, মৌলভীপাড়া, চঁরিপাড়া, বকশিয়াঘোনা, মিয়াপাড়া, সুন্দরীপাড়া, বামুলাপাড়া ও মাতবরপাড়া গ্রামে অনন্ত ১১০টি মৌচাক তৈরি করেছে মৌমাছি। এর মধ্যে আমিলাপাড়ার নজরুল ইসলাম ও নুর মোহাম্মদ সেলিমের বাড়িতে তিনটি করে ও আবু ছিদ্দিকের বাড়িতে পাঁচটি করে মৌচাক দেখা যায়।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক শফিউল্লাহ বলেন, ‘দেড় মাস আগে হঠাৎ একদল মৌমাছি তাঁর বাড়িতে চাক বাঁধতে শুরু করে। ১৫ দিন আগে একটি মৌচাক ভেঙে ২১ কেজি মধু পেয়েছি। কয়েক দিন পর আরেকটি মৌচাক ভাঙব। প্রতি কেজি মধু দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

কুতুবদিয়া উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামের বাড়ি রাজাখালী ইউনিয়নে। তিনি বলেন, গত বছরও হয়তো রাজাখালীর বিভিন্ন গ্রামে বিছিন্নভাবে দু–একটি মৌচাক ছিল। তবে শীত মৌসুমের শুরুতে রাজাখালীর বিভিন্ন গ্রামে শতাধিক মৌচাক দেখা যাচ্ছে। এ জন্য স্থানীয় লোকজনও উৎফুল্ল। প্রতি মৌচাক থেকে তাঁরা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন।

অনুকূল পরিবেশ পেলে অঞ্চলটি মধুপল্লি হতে পারে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি  বলেন, সুবিধাজনক স্থান, মধু সংগ্রহের পর্যাপ্ত উদ্ভিদ ও অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে বলে এখানে মৌচাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে গাছের কারণে বা পরিবেশের কারণে মৌমাছি এ এলাকায় এসেছে, তা যদি যথাযথভাবে শনাক্ত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এলাকাটি মধুপল্লি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ কবির হোছাইন বলেন, প্রথমত বর্ষা মৌসুমে মৌমাছির খাদ্যসংকট থাকে। এখন পর্যন্ত সংকট চলছে বলা যায়। এ কারণে যেখানে ফুলে বেশি মধু থাকে সেখানে মৌমাছি যাওয়া শুরু করে। দ্বিতীয়ত রানি মৌমাছি যেদিকে যায়, কর্মী ও রাজা মৌমাছিও সেদিকে যায়। রাজাখালীতে মৌমাছির শতাধিক চাকের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে।

রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘মধুপল্লি করতে পারলে এলাকার অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হতো। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কিছু করা যায় কি না দেখব।’