টাকার জন্য দৌড়ঝাঁপ শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর 

সানাউল্লাহ সাকিব: ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো হঠাৎ করে তারল্য–সংকটে পড়েছে। এসব ব্যাংক টাকা ধার করতে এখন প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর কাছে ছুটছে। প্রচলিত যেসব ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং সেবা রয়েছে, তাদের কাছেই ধারের জন্য ছুটছে। তবে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো এখনই ইসলামি ধারার সব ব্যাংককে টাকা ধার দিতে রাজি হচ্ছে না। 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার থেকে চালু করেছে ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য তার‌ল্য সুবিধা। এ সুবিধার আওতায় ইসলামি ব্যাংকগুলো সুকুক (শরিয়াভিত্তিক বিনিয়োগ বন্ড) জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। ব্যাংক পাঁচটি হলো ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। 

জানা গেছে, প্রচলিত ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপো (টাকা ধারের ব্যবস্থা), স্পেশাল রেপো ও বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় টাকা ধার করতে পারে। পাশাপাশি এক দিনের জন্য (কল মানি) ও বিভিন্ন মেয়াদে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংক টাকা ধার করতে পারে। আর ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর শুধু একে অপরের থেকে ও প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং সেবা থেকে টাকা ধার করতে পারে। 

হঠাৎ কেন সংকট
বাংলাদেশে ১০টি ইসলামি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। সাম্প্রতিক অস্থিরতায় ব্যাংকটির আমানত প্রতিদিন কমছে। গত সোমবার ব্যাংকটির আমানত কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকায়। গত ৩১ অক্টোবর ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।

ইসলামি ধারার সব ব্যাংককে এত দিন টাকা ধার দিয়ে আসছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। তবে ইসলামী ব্যাংক এখন টাকার জন্য অন্য ব্যাংকের কাছে যাচ্ছে। ফলে ইসলামি ধারার অন্য ব্যাংকগুলোও হঠাৎ করে তারল্য–সংকটে পড়ে গেছে।

জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ‘সাময়িক সমস্যার কারণে আমাদের আমানত কমে যাচ্ছে, তবে এটা বড় কোনো বিষয় নয়। এ জন্য অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও কিছু টাকা নিতে হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। আগামী সপ্তাহে কিছু ঋণের টাকা আদায় হবে। তখন পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।’ 

ইসলামী ব্যাংকের আমানত কমলেও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আমানত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির এমডি জাফর আলম। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহের তুলনায় আমাদের আমানত বেড়েছে। ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে ব্যবস্থা চালু করেছে, সেখান থেকে গতকাল মঙ্গলবার কিছু টাকা ধার করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেও একটি-দুটি ইসলামি ব্যাংক ভালো আছে বলে জানা গেছে। এসব ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য থাকায় সেগুলোকে অন্য ব্যাংকের কাছে টাকার জন্য ছুটতে হচ্ছে না।

প্রচলিত ধারার একাধিক ব্যাংকের এমডি জানান, ইসলামি ধারার কিছু ব্যাংক প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামি শাখা ও উইন্ডো থেকে উচ্চ সুদে টাকা ধার চাইছে। তবে ধার দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার প্রথম দিনেই ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে পাঁচটি ইসলামি ব্যাংককে চার হাজার কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ টাকা আজ বুধবার ব্যাংকগুলোর হিসাবে যুক্ত হবে। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক  বলেন, সুকুকের বিপরীতে প্রথম দিনে ৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুকুকের বিপরীতে প্রয়োজনমতো টাকা নিতে পারবে ইসলামি ব্যাংকগুলো।

নতুন সুযোগ
এদিকে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর এমন পরিস্থিতিকে প্রচলিত ব্যাংকগুলো নতুন সুযোগ হিসেবে দেখছে। পূবালী ব্যাংক সব শাখা ও উপশাখায় ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দেওয়া শুরু করেছে। ব্যাংকটির ইসলামি ধারায় ইতিমধ্যে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আমানত পেয়েছে। আর ঋণ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ইসলামি ধারায় আমরা আগামী দু-তিন মাসে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এ জন্য সব শাখায় এই সেবা চালু করা হয়েছে।’

আবার বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক গত ডিসেম্বরে চালু করেছে সিটি ইসলামিক। ব্যাংকটির সব শাখায় মিলছে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা। ইতিমধ্যে ব্যাংকটির এই সেবায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আমানত জমা হয়েছে।

দেশের ৬১ ব্যাংকের মধ্যে এখন ১০টি ইসলামি ধারার ব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির আমানত প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। অন্য ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, আল-আরাফাহ্, এক্সিম, শাহজালাল, স্ট্যান্ডার্ড ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। আর প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের শাখায় ইসলামি ধারার ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হয়। আর ১৩টি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ইসলামি ব্যাংকিং সেবা রয়েছে।