পাবনা জেলার মানচিত্র |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে বালুঘাটের দখলদারি নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের একাধিক পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। আহতদের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের অদূরে পদ্মা নদীর ধারে রেলওয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর মধ্যবর্তী একটি কফি হাউসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন ঈশ্বরদী শহরের আলীবর্দী খাঁ রোডের হাসান আলির ছেলে যুবলীগের কর্মী মাসুম আহমেদ (৩৭), শহরের আমবাগানের সানোয়ার হোসেনের ছেলে সম্রাট হোসেন (৩৪), মিরাজ (৩০) ও সুইট (৩২)।
ঘটনার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমালের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সভা থেকে এ ঘটনার জন্য যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমাল স্থানীয় এমপির ছেলে তৌহিদুজ্জামান দোলন বিশ্বাসকে দায়ী করেন।
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টুর সঙ্গে বালুর ব্যবসা নিয়ে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার মতবিরোধ চলে আসছিল। সাইফুজ্জামান পিন্টু সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএ থেকে পাকশী নদীর বালু কিনে নেন। ওই বালুতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ভাগ ছিল। বালুর ভাগ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সঙ্গে চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টুর দ্বন্দ্ব চলছিল। দ্বন্দ্বের করণে বালু উত্তোলনের পর সাইফ্জ্জুমান পিন্টু প্রায় তিন মাস হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে বালু স্তূপ করে রাখেন।
এ অবস্থায় শনিবার সকাল থেকে সাইফুজ্জামান পিন্টু এবং প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল মালিথার নেতৃত্বে দুই পক্ষই পৃথকভাবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর মাঝামাঝি স্থানে বনভোজনের আয়োজন করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুনরায় উত্তেজনা শুরু হলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় পদ্মার পাড়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ভাঙচুর ও গোলাগুলি শুরু হয়। এতে রূপপুর প্রকল্পের আশপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন।
চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টু বলেন, ‘পদ্মা নদী ড্রেজিং করে উত্তোলিত বালু তিনি বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে টেন্ডারে কিনেছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল এই বালু পরিবহন ও বিক্রিতে বাধা দেয়। এ জন্য তিন মাস ধরে বালু বিক্রি বন্ধ রয়েছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আজ থেকে বালু বিক্রি শুরুর কথা ছিল। এরই মধ্যে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।’
জহুরুল ইসলাম মালিথা বলেন, ‘ক্রয় করা এসব বালু সাইফুজ্জামান পিন্টু অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন যে বালু রয়েছে, সেগুলো পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের। সেগুলো দখল করে বিক্রি করার জন্য সাইফুজ্জামান পিন্টু সেখানে লোকজন জমায়েত করেন। আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে খাওয়াধাওয়ার আয়োজন করেছিল। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হবিবুল ইসলাম হব্বুল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু মন্ডলসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক বলেন, ‘এখানে অসুস্থ অবস্থায় তিনজন এসেছেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে রামেকে পাঠানো হয়েছে। আহতদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো কিছু মনে হয়নি।’
পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ শোনা যায় এবং একটি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।’
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, ‘বালুর আধিপত্য নিয়ে পাকশী চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টুর সঙ্গে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরোধ। বিরোধীদের জের ধরে আজকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ মামলা করেননি বা কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’