জিরুর রেকর্ড গড়া গোলে সহায়তা করে তাঁর কোলে চড়লেন এমবাপ্পে। পরে জোড়া গোল করেছেন এমবাপ্পে নিজেও | ছবি: রয়টার্স
খেলা ডেস্ক: প্রথমে গোল করালেন, পরে নিজেই করলেন জোড়া গোল। দুটি গোলই ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতো। অবশ্য এসব আর নতুন কি! ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে যে গল্পটা কিলিয়ান এমবাপ্পে শুরু করেছিলেন, তা ধরে রেখেছেন কাতারেও।
ফ্রান্সের জয় মানেই যেন এমবাপ্পের পায়ের জাদু। পোল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ষোলোতেও এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। এমবাপ্পের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সেই পোলিশদের ৩-১ গোলে হারিয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স উঠল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।
পিএসজি তারকার আলো ছড়ানোর রাতে রেকর্ড গড়েছেন অলিভিয়ের জিরুও। ম্যাচের প্রথমার্ধে দলকে এগিয়ে দিয়ে ফ্রান্সের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক হন জিরু (৫২)। এর আগে ফ্রান্সের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন থিয়েরি অঁরি (৫১টি)।
আল থুমামা স্টেডিয়ামে শুরুতেই আক্রমণে চোখ ছিল ফ্রান্সের। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই ফ্রি কিক পায় তারা। যদিও আঁতোয়ান গ্রিজমানের শট পোল্যান্ডকে বিপদে ফেলতে পারেনি। একটু পর কর্নার থেকে রাফায়েল ভারানের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
আর্জেন্টিনা ম্যাচের কৌশল বদলে পোল্যান্ড শুরুতে কিছুটা পজেশন নিয়ে খেলার চেষ্টা করে। তবে ফ্রান্সের মুহুর্মুহু আক্রমণে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না পোলিশরা। কখনো দুই উইং ধরে আবার কখনো মিড থেকে গিয়ে শট নিয়ে পোল্যান্ডকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
বিশেষ করে লেফট উইংয়ে এমবাপ্পের পায়ে বল গেলেই হুমকিতে পড়ছিল পোল্যান্ড। এর মাঝে অরেলিঁয়ে চুয়ামেনির ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট প্রতিহত করেন পোলিশ গোলরক্ষক ভয়চেক সেজনি।
১৭ মিনিটে উসমান দেম্বেলের শটও ঠেকান সেজনি। এ সময় পাল্টা আক্রমণে যেতে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার ছিল না পোল্যান্ডের। যদিও পায়ে বল রাখতেই কষ্ট হচ্ছিল তাদের। ২০ মিনিটে আবারও সেজনির কারণে কাছাকাছি গিয়ে গোল বঞ্চিত হয় ফ্রান্স।
তবে পরের মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত পোল্যান্ড। ডি-বক্সের বাইরে থেকে রবার্ট লেভানডফস্কির শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। এরপর অবশ্য লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করে পাোল্যান্ড। দুই একটি আক্রমণে হুমকিতেও পড়েছিল ফ্রেঞ্চ রক্ষণ। যদিও তা গোলের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ২৯ মিনিটে দেম্বেলের কাছ থেকে বল পেয়ে ফাঁকা পোস্টে গোল করতে ব্যর্থ হন অলিভিয়ের জিরু।
৩৫ মিনিটে পোলিশ ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে শট নেন এমবাপ্পে। সেই শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন সেজনি। ৩৮ মিনিটে তখন পর্যন্ত গোল করার সেরা সুযোগটি পেয়েছিল পোল্যান্ড। তবে পোলিশদের একাধিক প্রচেষ্টা ফিরে আসে গোললাইন থেকে। পোল্যান্ড না পারলেও ৪৪ মিনিটে ঠিকই গোল পেয়ে যায় ফ্রান্স। ম্যাচে তখন পর্যন্ত নিষ্প্রভ থাকা জিরুর কাছ থেকে আসে গোলটি। এমবাপ্পের সহায়তায় লক্ষ্যভেদ করেন জিরু।
বিরতির পরও বদলায়নি ম্যাচের ধারা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ফ্রান্সের আক্রমণ ঠেকিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিল পোলিশরা। ৫৬ মিনিটে ডি-বক্সের কাছাকাছি জায়গা নেওয়া এমবাপ্পের দুর্দান্ত এক শট পোলিশ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক বদলে মাঠের বাইরে চলে যায়।
৭৪ মিনিটে আবারও দেখা মেলে এমবাপ্পে জাদুর। প্রতি-আক্রমণ থেকে বল পেয়ে ডি–বক্সের ভেতর থেকে দুর্দান্ত এক বাঁকানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপ্পে। প্রথম গোলটি যে জায়গা থেকে করেছিলেন, সেখান থেকেই যোগ করা সময়ে করেন দ্বিতীয় গোলটি। পার্থক্য কেবল প্রথমটি ছিল কাছের পোস্টে আর পরের ছিল দূরের পোস্টে।
আর এমবাপ্পের জাদুকরী পারফরম্যান্সের পর শেষ দিকে পেনাল্টি থেকে সান্ত্বনার গোল পান রবার্ট লেভানডফস্কি।