সন্তানকে বিক্রি করেছিলেন স্বামী। সেই সন্তানকে পুলিশের সহায়তায় ফিরে পেয়ে বুকে আগলে রেখেছেন মা জান্নাতুন। রোববার দুপুরে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: বাচ্চা অসুস্থ। তাকে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বলে নিয়ে যান বাবা। ফিরে এসে স্ত্রীকে বলেন, বাচ্চা মারা গেছে। তিনি কবর দিয়েছেন। এই বলে স্ত্রীকে নিয়ে নার্সিংহোম থেকে বাসায় যান। কিন্তু মায়ের মন মানে না। তিনি বাচ্চার কবর দেখতে চান। বাবা আর কবর দেখাতে পারেন না। এ কথা শুনে এলাকাবাসী এই বাবাকে চেপে ধরেন। একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, ২৪ হাজার টাকায় সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। ঘটনার ১০ দিন পর আজ রোববার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট এলাকা থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এই বাবার নাম রহিদুল ইসলাম (৪৫)। তাঁর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়। স্ত্রী জান্নাতুনকে (১৮) নিয়ে তিনি রাজশাহী নগরের সিলিন্দা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। জান্নাতুন রহিদুলের তৃতীয় স্ত্রী। গত বছর তাঁদের বিয়ে হয়। জান্নাতুনের ভাষায়, রহিদুলের পেশা হচ্ছে ‘কবিরাজি আর ধাপ্পাবাজি’ করা।

জান্নাতুন বলেন, সন্তান প্রসবের পর নার্সিংহোম থেকে বাসায় গিয়ে তাঁর মন মানে না। তিনি মেয়ের কবর দেখতে চান। এই নিয়ে প্রতিদিনই স্বামীর সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হতো। রহিদুল তাঁকে মারধরও করেছেন। কিন্তু কবর দেখাতে নিয়ে যাননি। বিষয়টি তিনি এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেন। এলাকার লোকজন কবর দেখানোর জন্য রহিদুলকে চাপ দেন। একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন বাচ্চাটি তিনি ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এলাকার লোকজন তখন নগরের রাজপাড়া থানার পুলিশকে খবর দেন। আজ বেলা ১১টার দিকে পুলিশ রহিদুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

রাজপাড়া থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, থানায় আনার পর রহিদুল পুলিশকে জানায়, নগরের দাশপুকুর এলাকার তরিকুল নামের এক ব্যক্তির কাছে তিনি বাচ্চাটি বিক্রি (২৪ হাজার টাকায়) করেছিলেন। ওই এলাকা থেকে তরিকুলকে আটক করে পুলিশ। তরিকুল পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তিনি বাচ্চাটি গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌর সদরের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রীর কাছে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। পুলিশ রহিদুলকে থানায় আটক রেখে তরিকুলকে নিয়ে কাঁকনহাটে অভিযান চালায়। বেলা দেড়টার দিকে সিরাজুলের স্ত্রী বিউটি খাতুনের কাছ থেকে নবজাতকটি উদ্ধার করে পুলিশ। জান্নাতুন সন্তান ফিরে পাওয়ার আশায় থানায় বসেই ছিলেন। দুপুরে পুলিশ বাচ্চা এনে মায়ের কোলে দেয়। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার পরপরই মা জান্নাতুন নবজাতককে বুকের দুধপান করান।

এই অভিযানে গিয়েছিলেন রাজপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজল কুমার নন্দী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনায় মানব পাচার আইনে একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। বাচ্চার মা জান্নাতুন মামলার বাদী হবেন।