৮০ বছর বয়সী এ বৃদ্ধা একজন বাঁশিপ্রেমিক। শখের বসে শিখেছেন বাঁশি বাজানো। আর বর্তমানে বাঁশির সুরেই তাঁর জীবন চলে।
বাঁশিপ্রেমিক রহমত আলীর বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে। প্রয়াত বাবা নছির খান ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক। পরিবারের আর্থিক অসংগতিতে অভাব মাথায় নিয়েই যেন জন্ম নিয়েছেন রহমত।
দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি তার। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কৈশোর থেকেই বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। কিন্তু পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচেনি।
৫০ বছর আগে প্রতিবেশী এক চাচার বাঁশি বাজানো দেখে সেটি বাজানোর চেষ্টা চালান তিনি। একপর্যায়ে নিজে নিজেই বাঁশি বাজানো আয়ত্ব করেন রহমত। শখের বসে শেখা বাঁশি ঘিরেই এখন তাঁর জীবন।
পাড়ার আড্ডায়, চায়ের দোকানে, গ্রামের হাটবাজার ও যেকোনো বাস-ট্রেনে বাঁশি বাজান রহমত। এতে খুশি হয়ে অনেকেই তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেন।
অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে বংশীবাদক হিসেবে কদর থাকে না। এ জন্য বাঁশিকেই বেছে নেন জীবিকা হিসেবে। বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি গ্রামীণ হাটবাজার ও শহরের অলিগলিতে বাঁশি বিক্রি করেন তিনি। ২০, ২৫ ও ১০০ টাকা দামের পাঁচ ধরনের বাঁশি মেলে তাঁর ভ্রাম্যমাণ দোকানে।
সম্প্রতি ঈশ্বরদী বাজার ষ্টেশন রোড এলাকার কথা হয় তার সঙ্গে। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করি, বাঁশি বিক্রি করে প্রতিদিন আপনার রোজগার কত? রহমত বলেন, ‘এখন আর আগের মতো বাঁশি বিক্রি হয় না। প্রতিদিন গড়ে ৮-৯ টি বাঁশি বিক্রি করে ৭০-৮০ টাকা রোজগার হয়। তা দিয়ে বুড়াবুড়ির খেয়ে না খেয়ে চলছে সংসার।
তিনি বলেন, ‘দাশুড়িয়া রেল স্টেশনের পাশে তার একটি চায়ের দোকান ছিল। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এ বয়সে আর কোনো কাজ করার সামর্থ্য না থাকায় বাধ্য হয়ে বাঁশি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন।’
আক্ষেপের সুরে রহমত আলী বললেন, ‘৮০ বছর বয়সে বয়স্ক ভাতা পাবার কথা থাকলেও তার ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতা। চারটি ছেলের বাবা হয়েও শেষ বয়সে তার পাশে কেউ নেই। ছেলেরা মা-বাবার খোঁজ নেন না।’
কত দিন আর পথে পথে ঘুরে এভাবে বাঁশি বাজাবেন? রহমত বলেন, ‘আত্মার সঙ্গে বাঁশির সুর মিশে আছে। আত্মা যেদিন থাকবে না, সেদিন সুরও থেমে যাবে।’