৯ দিন বয়সী নবজাতককে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত মা ইতি খাতুন। সোমবার দুপুরে বগুড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে চুরি হওয়া নবজাতককে পাঁচ দিন পর মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা দুইটার দিকে বগুড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ বেগম সুমাইয়া সিদ্দিকার আদালতের মাধ্যমে ৯ দিন বয়সী নবজাতক আবদুল্লাহ আল ইউসুফকে তাঁর মা ইতি খাতুনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে ৯ নভেম্বর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে কৌশলে চার দিনের নবজাতককে চুরি করে পালিয়ে যান এক নারী।

গতকাল রোববার দুপুরে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় ফেলে রাখা অবস্থায় একটি নবজাতক উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে বগুড়া সদর থানার পুলিশ ইতি খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে গাজীপুরের চন্দ্রায় যায়। পরে ইতি ওই শিশুকে নিজের সন্তান বলে শনাক্ত করেন। আজ দুপুরে নবজাতকসহ ইতি খাতুনকে আদালতে হাজির করে। পরে আদালতের নির্দেশে ৯ দিন বয়সী নবজাতককে ইতি খাতুনের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

চুরি হওয়া নবজাতকের মা ইতি খাতুন বগুড়া সদর উপজেলার বানদীঘি উত্তর পাড়ার সৈকত জাহানের স্ত্রী। সৈকত জাহান পেশায় পোশাকশ্রমিক। সন্তান হারানোর পর ৯ নভেম্বর সৈকত বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেছিলেন।

পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছেলেসন্তান প্রসব করেন ইতি খাতুন। ৯ নভেম্বর দুপুরে চার দিনের নবজাতককে নিয়ে খালা রোজিনা খাতুন গাইনি বিভাগে বসেছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতনামা এক নারী এসে রোজিনাকে বলেন, নবজাতকের জন্য সরকারিভাবে হাসপাতালে পাঁচ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। এ জন্য কাগজপত্র ও নবজাতককে নিয়ে তাঁর সঙ্গে নিচতলায় যেতে হবে বলে রোজিনাকে জানান ওই নারী। নিচতলায় যাওয়ার পর কাগজপত্র ফটোকপি করে আনতে হবে বলে ওই নারী জানান। পরে ওই নারী নবজাতককে কোলে নিয়ে রোজিনাকে ফটোকপি করতে পাঠান। কিছু সময় পর রোজিনা সেখানে ফিরে এসে দেখেন, নবজাতককে নিয়ে ওই নারী সটকে পড়েছেন।

নবজাতক চুরির পর পাগলপ্রায় অবস্থা হয়েছিল মা ইতি খাতুনের। তবে আজ সন্তানকে ফিরে পাওয়ায় তিনি স্বস্তি প্রকাশ করেন। ইতি খাতুন বলেন, ‘বুকের ধনকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলাম। পাঁচ দিন কিছুই মুখে দিইনি। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। চুরি যাওয়া বুকের ধন ফিরে পাব, এটা কল্পনাও করিনি। বুকে পাথরচাপা কষ্ট ছিল। সন্তানকে ফিরে পেয়ে বুকটা হালকা লাগছে।’

গতকাল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-সংলগ্ন ছিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল নবজাতক উদ্ধারে গাজীপুরের চন্দ্রায় গিয়েছিল। আনিসুর রহমান বলেন, নবজাতকটি মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে চুরির সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও একাধিকবার নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ বিভিন্ন সময় দু-একজনকে গ্রেপ্তার করলেও পুরো চক্রটি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।