ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা নৃত্যে ও ঢাকঢোল বাজিয়ে ফজলে হোসেনকে অভ্যর্থনা জানান। শনিবার বিকেল রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজনৈতিক জীবনের ৫০ বছর পূর্তিতে নাগরিক সংবর্ধনা পেয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী–২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। ৭০ বছর বয়সী ফজলে হোসেনকে সংবর্ধনা জানাতে  শনিবার বিকেল রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে করা হয় নানা আয়োজন।

অনুষ্ঠানস্থলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা নৃত্যে ও ঢাকঢোল বাজিয়ে ফজলে হোসেনকে অভ্যর্থনা জানান। তাঁকে ঘিরে নৃত্যের তালে তালে শিল্পকলার মঞ্চ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানে একে একে রাজশাহীর অন্তত ৮০টি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান খান তাঁকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচনী প্রতীক হাতুড়ি তুলে দেন।

এরপর রাজশাহীর বিশিষ্টজনেরা বাদশার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক’ অর্থনীতিবিদ সনৎ কুমার সাহা বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা তাঁর ছাত্র ছিলেন। নিজের ছাত্র যখন ভবিষ্যতে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়, দেশের নাম উজ্জ্বল করে; তখন শিক্ষক হিসেবে তা অত্যন্ত গর্বের। তিনি বাদশাকে নিয়ে গর্ব করেন। একই ধারায় টানা ৫০ বছর রাজনীতিতে সক্রিয়তা শক্তিশালী চেতনা ও আদর্শের পরিচয় বহন করে। তাঁর একনিষ্ঠ দেশপ্রেম ও সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্মের অনন্য অনুপ্রেরণা।

বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে ফজলে হোসেন বাদশাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, রাজশাহীর প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে ফজলে হোসেন বাদশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। শুধু রাজনীতিই নয়, রাজশাহীকে শিক্ষানগরীতে পরিণত করতেও তাঁর অবদান স্মরণীয়।

ভাষাসংগ্রামী মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল আকাঙ্ক্ষা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ফজলে হোসেন এখন জাতীয় রাজনীতিক। রাজনীতিতে তাঁর ৫০ বছর শুধু কোনো সংখ্যা নয়, একটি সুদীর্ঘ পরিক্রমা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়নের জন্য ফজলে হোসেন প্রয়োজনে আরও ৫০ বছর রাজনীতি করবেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আবদুল হাদী বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই ফজলে হোসেন গণমানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে রাজনীতি করেছেন। কখনো কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ, আবার কখনো আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য লড়াই করেছেন নিরলসভাবে।

সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই সেদিন তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বিনিময়ে কখনোই কিছু প্রত্যাশা করেননি। চেয়েছেন শুধু একটি সমতাভিত্তিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ, যা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক ছাত্রনেতা মনজুর মোরশেদ। সংবর্ধনা উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির বাইরে ফজলে হোসেনের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন আন্দোলনের ছবি নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।

ফজলে হোসেন ১৯৫২ সালের ১৫ অক্টোবর রাজশাহী নগরের হড়গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অনার্সসহ অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশ স্বাধীনের পর প্রগতিশীল ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করেন ও ছাত্রদের দাবি আদায়ে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গিবাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কারাবন্দী হন।

১৯৮০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন। সে বছর ৬ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী নামে নতুন একটি ছাত্রসংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। আশির দশকজুড়ে আন্দোলনে থাকা বাদশা ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য হন। সর্বশেষ পেয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব।