চলনবিল বিধৌত খুবজিপুর হাটে পরীযায়ী পাখি বালিহাঁস বিক্রির সময় উদ্ধার করে অবমুক্ত করছেন চিকিৎসক আমিরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোরের গুরুদাসপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নাটোর: নাটোরের গুরুদাসপুরে ফেরি করে বিক্রির সময় দুটি বালিহাঁস ও পাঁচটি হট্টিটি পাখি উদ্ধারের পর অবমুক্ত করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে পৌরশহরের একটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ইসলাম তাঁর ক্লিনিকের ছাদে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পাখি অবমুক্ত করেন।

ওই চিকিৎসক জানান, উপজেলার চলনবিল বিধৌত খুবজীপুর হাটে পরিযায়ী পাখিগুলো বিক্রির জন্য এনেছিলেন অপরিচিত এক ব্যক্তি। পাখিগুলোর দাম বেশি চাওয়ায় গ্রামের বিক্রি হচ্ছিল না। সেখান থেকে শামীমুল ইসলাম নামের তাঁর এক পরিচিত ব্যক্তি খবরটি মুঠোফোনে তাঁকে জানান। পরে পাখিসহ বিক্রেতাকে আটক করে তাঁর দপ্তরে আনার জন্য বলেন চিকিৎসক আমিরুল ইসলাম। এ কাজের জন্য দুই হাজার টাকা পুরস্কারের আশ্বাস দেন।

মুঠোফোনে ওই সংবাদদাতার কথোপকথন টের পেয়ে পাখি ফেলে পালিয়ে যান বিক্রেতা। সেখান থেকে পাখিগুলো চিকিৎসকের দপ্তরে নিয়ে আসেন সংবাদদাতা। বিকেলে সংবাদকর্মীদের ডেকে পরিযায়ী পাখিগুলো তাঁর ক্লিনিকের ছাদ থেকে উড়িয়ে দেন আমিরুল ইসলাম। পরে পুরস্কারের দুই হাজার টাকা তুলে দেন সংবাদদাতা শামীমুল ইসলামের হাতে।

শামীমুল ইসলাম বলেন, তিনি পেশায় ভ্যানচালক। রোগী আনা-নেওয়ার সুবাদে চিকিৎসক আমিরুল ইসলামের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তাঁর। তিনি ভেবেছিলেন, পাখিগুলো কিনতে পারেন চিকিৎসক আমিরুল ইসলাম। এ কারণে মুঠোফোনে খবরটি দিয়েছিলেন। কিন্তু রান্না করে খাওয়ার বদলে উড়িয়ে দেবেন, তা জানা ছিল না তাঁর। পুরস্কারের দুই হাজার টাকা পেয়ে খুশি তিনি।

চিকিৎসক আমিরুল ইসলাম বলেন, দুটি বালিহাঁসের মধ্যে একটির ওজন ছিল ২ কেজি ৩০০ গ্রাম, অন্যটির ওজন ছিল ৮৫০ গ্রাম। বেশ শক্তিশালী ছিল হাঁস দুটি। হট্টিটি পাখিগুলোর ওজন ছিল গড়ে ২৫০ গ্রাম করে। প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে পাখিগুলো অবমুক্ত করেছেন তিনি। এতে আত্মতৃপ্তি বেড়েছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সংবাদকর্মী নাজমুল হাসান বলেন, শীতের শুরুতে চলনবিল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। বিল-জলাশয় ও নালাগুলোয় মিলছে মাছ। এ কারণে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা বেড়েছে চলনবিলে। একশ্রেণির মানুষ ফাঁদ পেতে, বিষটোপ দিয়ে যথেচ্ছভাবে পাখি শিকার করছে। এসব পাখি বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় হাটবাজারে। তাঁদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো অভিযান চালানো হলেও প্রশাসন পাখি শিকার ও বিক্রি বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।