বগুড়ায় ৬৬ ঘণ্টা পর খুলল আ.লীগ কার্যালয়ের তালা, নতুন করে ঝুলল ছাত্রলীগের কার্যালয়ে

আন্দোলনরত পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। শহরের টেম্পল সড়কের আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঝোলানো তালা ৬৬ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে মূল ফটকের তালা খুলে ভেতরে শুধু ছাত্রলীগের কার্যালয়ে নতুন করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতা ও তাঁদের সমর্থকেরা।

কমিটি বাতিলের দাবিতে গত তিন দিনের মতো বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরের সাতমাথায় টেম্পল সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে সেখানে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম, এ কে এম আসাদুর রহমান, জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের আন্দোলনে সমর্থন জানান তাঁরা। এরপর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের তালা খুলে শুধু ছাত্রলীগের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।

শুভাশীষ পোদ্দার বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল, মিটিংয়ে কোনো দিন অংশ নেননি, এমন বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ত্যাগী ও বঞ্চিতদের আন্দোলন যৌক্তিক। এ কারণে তাঁদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করা হয়েছে।

নতুন কমিটিতে সহসভাপতি পদ পাওয়া তৌহিদুর রহমান সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। বিতর্কিত কমিটি বাতিল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং সাবেক ছাত্রনেতারা আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করায় আমরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের তালা খুলে ভেতরে ছাত্রলীগের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। বিতর্কিত কমিটি প্রতিহতের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

চার দিন ধরে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের তালা লাগানোয় দলীয় কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা তৈরি হয়। চতুর্থ দিনের মতো চলা ছাত্রলীগের লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বগুড়া জেলা শাখা কার্যালয়ের তালা খুলে সেখানে কর্মী সমাবেশের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পদবঞ্চিত নেতাদের হটিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের তালা খুলে আজ বেলা তিনটার মধ্যে সেখানে প্রবেশের ঘোষণা দেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান বলেন, আজ বিকেলে কার্যালয়ে গিয়ে কর্মিসভা করেছেন তাঁরা। তবে সেখানে কোনো ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি হয়নি।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে পদবঞ্চিত নেতা ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় বৃহস্পতিবার জরুরি সভা ডাকে জেলা আওয়ামী লীগ। তবে দলীয় কার্যালয়ের বদলে আজ সকাল ১০টার দিকে এ সভা শুরু হয় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমানের বাসভবনে, যা আজ বেলা পৌনে একটা পর্যন্ত চলে।

আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের তালা খুললেও এবার ছাত্রলীগ কক্ষের ফটকে তালা দিয়েছেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান বলেন, ছাত্রলীগের আদর্শিক রাজনীতি না করেও যাঁরা পদ পেয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানোর সিদ্ধান্ত হয় আওয়ামী লীগের সভায়।

এর আগে গত সোমবার রাত ৯টার দিকে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সম্মেলন ছাড়াই সাত বছর পর ঘোষিত এ কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের নাম আছে। কমিটি ঘোষণার পরপরই শহরের টেম্পল সড়কে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জড়ো হন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। ওই ভবনে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সব সংগঠনের কার্যালয়। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ওই ভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দেন।