এসআই মো. ওয়ারেশ | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় কর্মরত এক উপপরিদর্শকের (এসআই) ঘুষ চাওয়ার বেশ কয়েকটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব অডিওতে আসামির সঙ্গে ঘুষের টাকা নিয়ে দেনদরবার করতে শোনা যায়। এ ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মো. ওয়ারেশ নামের ওই এসআইকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

রাজপাড়া থানা সূত্রে জানা গেছে, ৩ নভেম্বর নগরের আইডিবাগান পাড়া এলাকার সম্রাট নামের এক যুবককে মারপিটের অভিযোগে চারজনের নামে একটি মামলা হয়। এসআই ওয়ারেশ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান। তখনই তিনি আসামিদের সঙ্গে কথা বলে ঘুষের বিনিময়ে গ্রেপ্তার করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে ৭ নভেম্বর আসামিরা আদালত থেকে জামিন নেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য এসআই ওয়ারেশের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান  বলেন, ঘুষ চাওয়ায় তাঁর থানার একজন পুলিশের এসআইকে পুলিশ লাইনসে পাঠানো হয়েছে।

যা আছে অডিওতে
ছড়িয়ে পড়া তিনটি অডিও পদ্মা ট্রিবিউন এর কাছে এসেছে। এর একটিতে ঘুষের টাকা নেওয়ার জন্য এসআই ওয়ারেশকে মুঠোফোন নম্বর দিতে শোনা যায়।
ওই অডিওর কথোপকথনটি ছিল

– ‘এই কত পাঠাচ্ছ, এটার জন্য তুমি আমারে..।’
– ‘স্যার, ২ হাজার টাকা পাঠাচ্ছি, পরে বাকি ৩ হাজার টাকা পাঠাব কাল। এটার জন্য কোনো টেনশন নাই স্যার।’
– ‘যদি ওই রকম মনোভাব রাখ তাহলে তো সমস্যা ভাই। কী শুনব তোমার কথা... এই এখন ৫ হাজার টাকা মিলিয়ে দাও।’
– ‘আমি কালকেই আবার ৩ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখন ২ হাজার টাকা ম্যালা কষ্টে জোগাড় করেছি স্যার।’
– ‘ধুর ব্যাটা...।’

আরেক অডিওতে রাফি নামের এক ব্যক্তিকে ফোন করে এসআই ওয়ারেশকে টাকা চাইতে শোনা যায়। ঘুষ নিয়ে কথা বলার সময় থানার ওসির জন্যও ‘বাজেট’ রাখতে বলতে শোনা যায়। অডিওর কথপোকথনটি ছিল—
–‘মীমাংসার জন্য খরচ পানি দেওয়া লাগবে স্যার।’
–‘আর শোন, আর একটা কথা বলি। এটা তো ওসি স্যারই ছাড়া করা যাবে না। তুমি ওসি স্যারের জন্য একটা বাজেট রাইখো। বোঝাইতে পারছি। ওটা আমার মাধ্যমে আমি স্যারকে দিয়ে দিবনি যে এই কাহিনি। কালকে যখন ফোনটা দিবে...। আচ্ছা তাহলে ঘুমাও।’
– ‘আচ্ছা স্যার। ঠিক আছে। সামনাসামনি কথা হবে।’
– ‘ আমি তো বলছিলাম যে তোমাদের যেটা দেখার দেখিবো। বিশ্বাস পেয়েছ তো।’
–‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, স্যার। অবশ্যই বিশ্বাস আছে বলেই তো বাড়িতেই ছিলাম।’
– ‘তোমাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। পরিচিত লোকগুলোকে তো আর হয়রানি করা ঠিক না।’
– ‘আচ্ছা স্যার, ঠিক আছে।’

আরেকটি অডিওর কথপোকথনটি ছিল
–‘ওই যে এই মোড়ে আছি, তোমার বাসা পর্যন্ত আমি যাব না, কথা বোঝ নাই। চায়ের দোকানের এই দিকে আছি দেখা করে যাও।’
–‘স্যার, টাকাটুকা একেবারে কাছে নেই। অবস্থা খুব খারাপ স্যার।’
–‘জামিন নিছ, এটা স্বাভাবিক।’
– ‘আপনি একটা কথা বলছেন, সবই ঠিক আছে।’
– ‘শোন, আমি কথা বলি। আমার সঙ্গে ফোর্সের চা-নাশতা খাওয়া লাগবে। তাঁরা তো বেশি আপত্তি করে নাই।’
– ‘স্যার, স্যার, আমি ধরেন আপনাদের কোনো কথা ফেলব না। যেটা বলবেন, সেটাই করব। একটা দিন সময় দিন স্যার।’
–‘এই দিকে কি কোনো পরিচিত লোক নাই। এই মোড়ের কোনো দোকানদারের সঙ্গে পরিচয় নাই। আকাম করার সময় তো অবশ্যই করতে পারো। সামান্য একটা আবদার করলাম, সেটা তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ।’

–‘স্যার আপনার আবদার আমি ফেলব না তো। আমি জবান দিলাম, কালকেই দিব।’

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রফিকুল আলম বলেন, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ওই এসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী অনুসন্ধান সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।