ইজাহার প্রামাণিক | ছবি: সংগৃহীত |
প্রতিনিধি পাবনা: পাবনার ইজাহার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন পাবনার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামবাসী। বাবা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহন প্রামাণিকের ক্ষমতার দাপটে জমি দখল, চাঁদাবাজি, স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাসহ নানা অপকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ ইজাহারের বিরুদ্ধে। ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও সাহস পায় না এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, কামারগাঁও দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন নিয়ে ইজাহারের কথামতো কাজ না হওয়ায় গত ২৬ অক্টোবর শিক্ষক আবু সাইদকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে এনে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় পরদিন সদর থানায় ইজাহার, সোহেল, আকমল, মোতালেবের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৩-৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আবু সাইদ।
মাদ্রাসার সকল শিক্ষক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিচার দাবি করেন। ইজাহার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন আবু সাইদ ও তার সহকর্মী শিক্ষকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক লুৎফর রহমানকেও মারধর করে ইজাহার বাহিনী। ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
এদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষক আবু সাইদের উপর হামলার সংবাদ প্রকাশের পর ইজাহার বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে একের পর এক অভিযোগ জানাতে থাকেন স্থানীয়রা।
গত বুধবার সরেজমিনে কামারগাঁও গ্রামে গিয়ে এসব অভিযোগ জানা যায়। তবে, এসব বিষয়ে নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি অধিকাংশ মানুষ। তারা জানান, অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে ইজাহার বাহিনীর অত্যাচার। তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাননি আওয়ামী লীগের নেতারাও।
মালঞ্চি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ মাস্টার জানান, দীর্ঘ দিন তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। দুঃসময়েও বিএনপি-জামাত অধ্যুষিত এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
কিছুদিন আগে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তার দুই ছেলেও চাকরির জন্য বাড়ির বাইরে থাকে। এই সুযোগে ইজাহার বাহিনী কামারগাঁও বাজারে তার ২০ শতক জমি দখল করে নিয়েছে। প্রায় ৩৫ বছর আগে কেনা জমির জাল কাগজ তৈরি করে সেখানে ঘর তুলে নৌকা মার্কার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।
কোনোভাবেই তিনি জমি উদ্ধার করতে পারছেন না। নিরুপায় হয়ে তার স্ত্রী আদালতে মামলা করেছেন। এরপর থেকে মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ইজাহার ও তার দলবল।
আক্ষেপ করে আব্দুল হামিদ মাস্টার বলেন, ‘যে দলের জন্য সারা জীবন কষ্ট করে সংগঠন গোছালাম, সে দলের নামেই এখন অত্যাচারিত হতে হচ্ছে। আমি এর বিচার কার কাছে চাইব?’
স্থানীয় গ্রামবাসী আলতাফ খাঁ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে দেখছি এই জমি ক্রয়সূত্রে হামিদ মাস্টার ভোগ দখল করে আসছেন। জমির পুকুর হামিদ মাস্টারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ইজাহারের পরিবারও মাছ চাষ করেছে। হঠাৎ করেই তারা দাবি করছে এ জমি তাদের। ক্ষমতার দাপটে মাটি ভরাট করে দোকান ঘর তৈরি করেছে। সেখানে নৌকা ঝুলিয়ে অপকর্ম জায়েজ করার চেষ্টাও চলছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কামারগাঁও গ্রামের একাধিক গ্রামবাসী জানান, মোহন প্রামাণিক ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও তার ছেলে ইজাহারই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে ইজাহার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
ইজাহার ও তার প্রধান সহযোগী সোহেলের ভয়ে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত থাকে। নানা অজুহাতে তারা এলাকার মানুষের কাছে চাঁদাবাজি করে। মাদ্রাসা থেকেও নানাভাবে টাকা আদায় করে। নিয়োগ বাণিজ্য করতে তারা ম্যানেজিং কমিটিরই নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করছে। তাদের নামে মামলা হওয়ার পরেও প্রকাশ্যে তারা এলাকায় ঘুরে বেড়ায়।
মালঞ্চি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আলিম বলেন, ‘ইজাহারের বাবা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি। কিন্তু ইজাহারের কোনো দলীয় পদ নেই। ফলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। তার বাবাকে অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। মাদ্রাসায় হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
তবে, এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মো. ইজাহার প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘আমি এলাকায় কারো জমি দখল করিনি। আমার চাচাতো ভাই জমি কিনে তার দখল নিয়েছে। সেই দোকানঘর তৈরি করেছে। আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির অভিযোগ সত্য নয়। মাদ্রাসা শিক্ষককেও মারধোরের অভিযোগ মিথ্যা।’
এ বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষক মারপিটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কামারগাঁও গ্রামে আব্দুল হামিদের জমি জোরপূর্বক দখল চেষ্টার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ মাটি ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’