ভোটের আগের রাতে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতার ভাই গুলিবিদ্ধ

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচনে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আবদুল আওয়াল খান। মঙ্গলবার রাত ১০টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ তিনজন আহত হয়েছেন। তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার শোমসপুর ইউনিয়নের চকহরিপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার শোমসপুর গ্রামের আবদুল আওয়াল খান (২৩), একই গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে সোহেল শেখ (৪০) এবং জাফর শেখের ছেলে মজনু শেখ (৪০)। আওয়ালের গলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তিনি খোকসা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শিমুল খানের ছোট ভাই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাতে চকহরিপুর এলাকায় উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রার্থী বাবুল আকতার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঘোড়া) মোতাহার হোসেন ওরফে খোকনের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ তিনজন আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানন্তর করা হয়। সংঘর্ষের পর থেকে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

রাত সোয়া ১০টার দিকে গুলিবিদ্ধ আবদুল আওয়াল খানকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক রাকিবুল ইসলাম বলেন, রোগীর গলা দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। আরও রক্ত লাগবে। রোগীর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। রাত পৌনে ১১টার দিকে রোগীকে হাসপাতালের অস্ত্রোপচারকক্ষে নেওয়া হয়।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। তারপরও দুটি পক্ষ প্রচারণা চালানোর সময় মুখোমুখি হয়ে যায়। এতে সংঘর্ষ বাধে। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

খোকসা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শিমুল আহমেদ খান বলেন, ‘কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি (সংসদ সদস্য) সেলিম আলতাফ জর্জ ও বাবুল আক্তারের (চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী) সন্ত্রাসী বাহিনী রাজন, মকুল, টিপু, টুটুল, রশিদ, শাফি, সবুজ, মদন, আইনাল, ইয়াকুব সবাই মিলে আক্রমণ করে আমার ছোট ভাইকে গুলি করেছে, সে এখন মৃত্যুশয্যায়। এই সন্ত্রাসীদের বিচার চাই। ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে যদি নিরাপত্তা না পাই, তাহলে কে পাবে?’

অভিযোগের বিষয়ে বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলির ঘটনা শুনিনি। শিমুলের স্ট্যাটাসে দেখলাম। আর ছাত্রলীগ যদি করবে, তবে আমরা গুলি করব কেন? আমি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী। ওর (শিমুল) চক্রান্ত হতে পারে।’ শিমুল আহমেদ খান যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা সঠিক নয় দাবি করে ঘটনার তদন্ত দাবি করেন বাবুল আক্তার।

পুলিশ সুপার খাইরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, খোকসায় পুলিশ বিফ্রিংয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল। প্রচারণার বিষয়টি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দেখার দায়িত্ব। তারপরও ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশসহ পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

বুধবার সকাল থেকে খোকসা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দীন খান খোকসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ফলে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।