গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির ভবনে ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের উদ্বোধন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম | ছবি: সংগৃহীত |
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীবাসীর যেকোনো নাগরিক সমস্যার সমাধান এখন থেকে আরও সহজ হবে। এ জন্য ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (ইওসি) চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সেন্টারের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আপত্কালে জরুরি সাড়া দেওয়া ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা, মশার উৎপাত, পয়োনালা, সড়কবাতি সংস্কারসহ বিভিন্ন অসুবিধার কথা ছবি তুলে অ্যাপসের মাধ্যমে পাঠালে তাৎক্ষণিকভাবে জনদুর্ভোগ কমানোর ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে নগর ভবনে ইওসির উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, সারা বছরই নিয়মিতভাবে ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার কার্যক্রম চালাবে। কেন্দ্রীয়ভাবে এখান থেকে জলাবদ্ধতার জায়গা, ময়লার গাড়ি ও মশকনিধন কর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া সবার ঢাকা অ্যাপসের অভিযোগ, রাজস্ব, খাল, ফুটপাত ও পদচারী–সেতুর চলন্ত সিঁড়ি, অস্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র, স্মার্ট সড়কবাতিসহ বিভিন্ন সেন্সর নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেন, নগরের যেকোনো সমস্যার ছবি তুলে ঠিকানাসহ সবার ঢাকা অ্যাপের মাধ্যমে জানালে ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে দ্রুত প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রমাগত অনেক ঝুঁকির মুখোমুখি হই।
ভূমিকম্প ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘন ঘন না হলেও জলাবদ্ধতা, মশার প্রজননকেন্দ্র, নালা, বর্জ্য, রাস্তা, গণশৌচাগার, পার্ক, সড়কবাতিসহ অনেক কিছু নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছি। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবকিছু নেটওয়ার্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। শহরের কোথাও এসব সমস্যা হলে নিয়ন্ত্রণকক্ষে তথ্য চলে আসবে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
এ কেন্দ্রের কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, সবাই তথ্য দিয়ে, অভিযোগ জানিয়ে সহযোগিতা করলে দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। জনগণকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি জনগণ সম্পৃক্ত হলে সমস্যার সমাধান সহজে করা সম্ভব।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের (ইউআরপি) অধীনে তৈরি ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে (ইওসি) তিন সেট ভিডিও ওয়াল সিস্টেম (ভিডব্লিউএস) আছে। প্রতিটি সেটে ১৮টি করে মোট ৫৪টি স্ক্রিন রয়েছে। প্রতিটি স্ক্রিনের আকার ৫৫ ইঞ্চি। প্রতিটি ওয়াল ২৪ ফুট চওড়া এবং ৭ ফুট উঁচু।
এ ছাড়া ভিডিও ওয়াল সিস্টেমের জন্য কন্ট্রোলার, ট্রান্সমিটার, রিসিভার এবং ওয়াল ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার আছে। ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে ভিডিও নজরদারির সুবিধার জন্য ৩২টি আইপি ক্যামেরা ও নেটওয়ার্ক ভিডিও থাকবে। পাশাপাশি রেকর্ডার, ভিডিও ডেটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা, ভিডিও পর্যবেক্ষণের স্টেশন এবং ভিডিও ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার আছে। এ ছাড়া ৭০ টেরাবাইট ক্ষমতার স্টোরেজ এরিয়া নেটওয়ার্ক (এসএএন) রয়েছে, যা ভবিষ্যতে ৩ পেটাবাইট পর্যন্ত উন্নীত করা যাবে। ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে রয়েছে প্রতি মিনিটে ১০০ মেগাবাইট গতির ইন্টারনেট সংযোগব্যবস্থা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলাম এবং ঢাকা উত্তর সিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ভূমিকম্প দুর্যোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক অনুশীলন ডিজাস্টার রেসপন্স এক্সারসাইজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে (ডিআরইই বাংলাদেশ ২০২২) অংশগ্রহণকারী ৩১৪ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ওই দলে ২৭টি দেশের সেনা কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা আছেন।