পুলিশের একটি দল ৭ থেকে ১০ জন সাধারণ আসামিকে দুই হাত পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে প্রিজন ভ্যানের সামনে আনে। পরে তাঁদের তল্লাশি করে ভ্যানে তোলা হয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত, ২৩ নভেম্বর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার আদালত এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর আদালতে আসামিদের আনা-নেওয়ার দৃশ্য বদলে গেছে। আগের চেয়ে আরও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে আনা হচ্ছে। এরপর আদালতের হাজতখানা থেকে পুলিশ প্রহরায় তাঁদের তোলা হচ্ছে এজলাসকক্ষে।

দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার চতুর্থ দিনের মাথায় বুধবার দেখা গেল, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি ও জঙ্গি আসামিদের পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে তোলার দৃশ্য। পাশাপাশি সাধারণ আসামিদেরও কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে তুলতে দেখা গেছে। এই আসামিদের কাউকে কাউকে আবার পিঠমোড়া দিয়ে পরানো হয়েছিল হাতকড়া।

আগে দুর্ধর্ষ আসামি আনা-নেওয়ার সময় ডান্ডাবেড়ি পরানো হতো। তবে তিন বছর আগে উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী, কোনো আসামিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাজতখানা থেকে আদালতে তোলা হয় না, শুধু হাতকড়া পরিয়ে তোলা হয়।

আজ সকালে আদালতে গিয়ে দেখা যায়, যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ও জঙ্গি আসামিদের কারাগার থেকে ডান্ডাবেড়ি পেরিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়েছে। আদালতে শুনানি শেষে দুপুরের পর থেকে আবার আসামিদের প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে বেলা দুইটার দিকে দেখা গেল, ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যা মামলার তিন আসামিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছে। পরে বিকেল চারটার দিকে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আরও এক আসামিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এরপর দেখা গেল, ঢাকা জেলা পুলিশের একটি দল অন্তত ৭ থেকে ১০ জন সাধারণ আসামিকে দুই হাত পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে প্রিজন ভ্যানের সামনে আনা হয়। এ সময় একে একে তাঁদের তল্লাশি করে ভ্যানটিতে তোলা হয়।

পিঠমোড়া দিয়ে আসামিদের প্রিজন ভ্যানে তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) মতিয়ার রহমান বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই আসামিদের দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরানো হয়েছে। এখানে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি।’

তবে পিঠমোড়া দিয়ে হাতকড়া পরানোর বিষয়টিকে ‘অমানবিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা সাবেক জেলা ও দায়রা জজ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না।’

ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যা মামলার এক আসামিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে প্রিজন ভ্যানের কাছে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত, ২৩ নভেম্বর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

গত রোববার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশকে মারধর ও চোখে স্প্রে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যান সহযোগীরা। ওই আসামিদের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল। এ ঘটনার পর থেকে ঢাকার আদালতে পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। হাজতখানা থেকে কড়া নিরাপত্তায় আসামিদের আদালতে তোলা হচ্ছে। আর আসামি আনা-নেওয়ার কাজে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ৩০টি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও ৩০টি হেলমেট দেওয়া হয়েছে।

এরপর গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপকমিশনারের পক্ষ থেকে কারাগার থেকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত হাজতখানার পরিদর্শক আবদুল হাকিম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘কারাগার থেকে যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ও জঙ্গি আসামিদের আজ ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা হয়। পরে আদালতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা তাঁদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে আদালতে তুলেছেন।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার আদালতগুলোতে প্রতিদিনই ৬৫০ থেকে ৭০০ আসামিকে হাজির করা হয়ে থাকে। পৃথক চারটি হাজতখানা থেকে আদালতগুলোতে আসামিদের হাজির করা এবং সেখান থেকে আবার হাজতখানায় নেওয়ার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন ১৯০ থেকে ২০০ পুলিশ সদস্য। প্রয়োজনের তুলনায় এ সংখ্যা কম। ফলে আদালতে আসামি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তায় ঘাটতি থেকে যায়। এ দুর্বলতাকেই কাজে লাগিয়েছে জঙ্গিরা।