সূর্যপূজা করছেন নারীরা। সোমবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: ভোর থেকে বুকসমান পানিতে হাত জোড় করে প্রণামের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা। পুব আকাশে চোখ তাঁদের, সূর্য ওঠার অধীর অপেক্ষায়। কিন্তু কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘলা আকাশে সূর্যের আর দেখা মেলে না। মাঝেমধ্যেই শঙ্খের আওয়াজের সঙ্গে চলছে উলুধ্বনি। অনবরত বেজে চলেছে ঢাক। অবশেষে সকাল সোয়া সাতটার দিকে সূর্যের দেখা মিললে শেষ হয় পূজা।
আজ সোমবার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুকুরে এ দৃশ্য দেখা যায়। উপজেলার নারী ও পুরুষেরা সেখানে সূর্যপূজা করছিলেন। এটি ‘ছট পূজা’নামেও পরিচিত।
রোববার বিকেলেও সেখানে পূজা হয়। বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে সূর্যকে প্রণাম করেন নারী-পুরুষ। এর আগে বাড়িতে পূজার কিছু আনুষ্ঠানিকতা করেন তাঁরা। এরপর পূজার প্রসাদ কুলায় সাজিয়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে পুকুরের দিকে রওনা হন।
পৌরসভার হরিজন কলোনির নাদিম বলেন, অনেক আগে থেকেই হরিজনদের মধ্যে চলে আসছে সূর্যপূজার চল। পরিবারের সদস্যদের রোগমুক্তি, চাওয়া-পাওয়া বা সন্তানসন্ততির আশায় সূর্য দেবতার পূজা দেওয়ার মানত (অঙ্গীকার) করে সূর্যপূজা করা হয়। পরিবারভিত্তিক এ পূজা হয়। তবে গ্রামের সবাই নদীপারে একসঙ্গে যাওয়া-আসা করেন। পূজার প্রসাদ ফলমূল ও মিষ্টান্ন সবার মধ্যে বিতরণ করা হয়। শ্যামপূজার (কালীপূজা) প্রতিমা বিসর্জনের ছয় দিনের মধ্যেই শেষ করতে হয় সূর্যপূজা। রাত থেকে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পূজার রাতে প্রসাদ খাওয়ার পর শুরু হয় ওই পরিবারের নারী-পুরুষের উপবাস। পরদিন বিকেলে পুকুরের উদ্দেশে যাত্রা করতে হয়।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ ঈশ্বরদী শাখার সভাপতি সুনীল চক্রবর্তী জানান, দেবতার সন্তুষ্টি এবং মনোবাসনা পূরণের জন্য নারীরা বিভিন্ন ডালায় ফলমূল, প্রদীপ সাজিয়ে পুকুরের পানিতে নেমে সূর্যের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করেন।