কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সবচেয়ে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের প্রধান প্রতিযোগিতা শুধু মানুষ জড়ো করা। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও শান্তির দিকে তাদের নজর নেই। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি বদিউর রহমান। শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল আয়োজন উদ্বোধন করেন সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মোহাম্মদ ইদু, প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক ও ছড়াকার আখতার হুসেন, মুক্তিযোদ্ধা ও কমিউনিস্ট নেত্রী লীনা চক্রবর্তী, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী নারী ফুটবল দলের কয়েকজন খেলোয়াড়ের শিক্ষক মালা রানী সরকার, বন্ধ পাটকল খোলার দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মোহাম্মদ নওশের আলী এবং চা–শ্রমিকদের আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সন্ধ্যা ভৌমিক।

জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর আলোচনাপর্বে সন্ধ্যা ভৌমিক বলেন, ‘চা–শ্রমিকদের জীবনের গল্প এত করুণ যে শুনলে যে কারও চোখে পানি চলে আসবে। একটি সভ্য দেশে আমরা সবার মতো ভালো থাকতে চাই। অথচ বংশপরম্পরায় আমরা আজও ব্রিটিশ আমলের মতো শোষিত। মাত্র ১৭০ টাকা কোনো দেশে মজুরি আছে বলে মনে হয় না। আমরা আন্দোলন করেছিলাম যেন আমাদের মজুরি অন্তত ৩০০ টাকা করা হয়।’

সন্ধ্যা ভৌমিক আরও বলেন, ‘শহরের নাগরিকদের দিকে তাকান, আর আমাদের দিকে তাকান। আমাদের মজুরি বাড়লে তাঁদের মুনাফা কমে যাবে। রেশনের নামে তাঁরা আমাদের পচা চাল দিচ্ছেন। আধা কেজি চালে ছয়জনের সংসার চলে না। যে মজুরি দেওয়া হয়, তার চেয়ে আমাদের ঘরভাড়া বেশি। আমরা এমন অমানবিক জীবন যাপন করছি যে বাগানের বাইরে বেরিয়ে শহরমুখী হব, সেই উপায় নেই।’

আখতার হুসেন বলেন, ‘উদীচী আজ কিছুটা হলেও বিচ্ছিন্ন। পুরোনো কর্মীদের খুব একটা ডাকা হয় না। সব অভিমান ভুলে তাঁদের ডাকতে হবে, তাঁদের কাছে বহু স্মৃতি। সেসব সংরক্ষণ করতে হবে। সংগঠনটিকে প্রাণ দিতে হবে। আমরা নতুন দিনে প্রবেশ করেছি। নতুন গান লিখুন, ভালো নাট্যকার, গায়কদের দলে আহ্বান করুন।’

উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, বিশ্ব যখন মহামারি অতিক্রম করে সামনে এগোচ্ছে, তখন রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এ কারণে বিশ্বে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশেও তেমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। এসব আড়াল করতে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে উদীচী সাংস্কৃতিক লড়াই আরও বেগবান করতে চায়। মানুষের অন্তর্গত সমৃদ্ধি কাজে লাগিয়ে এ ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে চায়।

সভাপতির বক্তব্যে বদিউর রহমান বলেন, ‘পাটকল বন্ধ, চা–শ্রমিকদের মজুরি শিউরে ওঠার মতো, মেয়েরা ঘরের বাইরে বের হতে পারে না—এ হচ্ছে সমাজের অবস্থা। এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে অন্ধকার নেই। তবে এই অন্ধকার কেটে যাবে। জয় আমাদের হবেই। জানি না কতটুকু পারব, তবুও শেষ লড়াই করে আমরা কুজ্ঝটিকা, প্রহেলিকা ভেদ করে আলো জ্বালবই।’

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুরুতেই কেন্দ্রীয় সংসদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন দুর্নীতিবিরোধী গীতি-কাব্য-নাট্য আলেখ্য ‘ধর ধর, চোর চোর’। উদীচীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমের লেখা ও সুরে এর নির্দেশনা দিয়েছেন অমিত রঞ্জন দে। এ ছাড়াও ছিল মূকাভিনয়, একক সংগীত, দলীয় নৃত্য ও আবৃত্তি।