সাহাপুর শহীদ আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ মিনারের বেদিতে মঞ্চ বানিয়ে অনুষ্ঠান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে শহীদ মিনার বেদীতে জুতা সেন্ডেল পায়ে অশ্রদ্ধা ও অবহেলায় মঞ্চ বানিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। 'জাতীয়তাবাদী যুবদল ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর কমিটির' (একাংশ) ব্যানারে বৃহস্পতিবার বিকেলে যুবদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ঈশ্বরদীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নিন্দা ও সমালোচনার শুরু হয়েছে। নিজ দলের নেতাকর্মীরাও এনিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলার সাহাপুর শহীদ আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য স্কুলের মাঠের শহীদ মিনারটি ঘেরা পর্দা ঢেকে এর পাদদেশের উপর প্যান্ডেল ও মঞ্চ বানানো হয়। আর শহীদ মিনারের উপরেই দলীয় নেতা-কর্মীরা অবাধে জুতা স্যান্ডেল পায়ে চলাফেরা ও বক্তব্যে দেন। এভাবে শহীদ মিনারের উপর জুতা ও সেন্ডেল পায়ে শ্রদ্ধা অবহেলায় প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরি করায় দলের উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তারা মৌখিকভাবে এর বিরোধিতাও করেন। কিন্তু উপস্থিত কয়েকজন নেতার অনুরোধে ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা আর কিছু বলেননি। মঞ্চেই জুতা সেন্ডেল পায়ে হাটাহাটি, আলোচনা সভা ও কেক কাটার কর্মসূচী পালিত করা হয়।

শহীদ মিনারের বেদিতে জুতা স্যান্ডেল পায়ে নেতাকর্মীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এ অনুষ্ঠানে উপজেলা যুবদলের আহবায়ক  সুলতান আলী বিশ্বাস টনি সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রকি, সাহাপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদুল, সদস্য সচিব রমজান আলী, সলিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক হাসান আলী বিশ্বাস, ঈশ্বরদী পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুলাল মণ্ডল, বিএনপি নেতা আওলাদ হোসেন কিরণ, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, জেলা ছাত্রদলের সদস্য সম্রাট হোসেনসহ উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি ও সকল থানার বিএনপি একাংশের নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফান্টু বলেন, ‘যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন এবং যারা নিজেদের জাতীয় নেতা বলে দাবি করে, তাদের কাছ থেকে শহীদ মিনারের অবমাননা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা দলটির নেতাকর্মীদের অজ্ঞতা নাকি ধৃষ্টতা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

অনুষ্ঠানের অতিথিরা একে একে সবাই জুতা পায়ে মঞ্চে উঠে চেয়ারে বসেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সাহাপুর ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাজটি করা আমাদের ভুল ছিল। আগামীতে আমরা আর শহীদ মিনারের বেদিতে মঞ্চ করব না। এটা আমাদের ভুল হয়েছে।’

উপজেলা যুবদলের এক নেতা বলেন, শহীদ মিনারের বেদিতে মঞ্চ বানানো হলেও সেখানে কার্পেট বিছানো ছিল। তবুও জুতা সেন্ডেল পায়ে হাটাহাটি ও শহীদ মিনার ঢেকে মঞ্চ করা মোটেও ঠিক হয়নি। এটা নেতৃত্বের অজ্ঞতা।

উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সুলতান আলী বিশ্বাস টনি বলেন, 'আমরা পর্দা দিয়ে ঢেকেই সেখানে মঞ্চ বানিয়ে অনুষ্ঠান করেছি, যাতে শহীদ মিনারের অশ্রদ্ধা না হয়'।