শবনম বুবলী, শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস | কোলাজ

বিনোদন প্রতিবেদক: চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীর সঙ্গে ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের প্রেম-বিয়ের খবরটি তাঁরা প্রকাশ না করা পর্যন্ত জানা যায়নি। অথচ তার আগে প্রেম-বিয়ে, এমনকি সন্তানের খবর জানতে সংবাদকর্মীরা বারবার জিজ্ঞাসা করলেও তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর আগে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় বুবলী এফডিসিসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে শুটিং করলেও বিয়ে-সন্তানের বিষয়টি অস্বীকার করেন। গেল ২৭ সেপ্টেম্বর শাকিব খানের প্রথম সন্তান আব্রাহাম খান জয়ের জন্মদিনে বুবলী তাঁর ফেসবুকে বেবিবাম্পের ছবি পোস্ট করলে তাঁদের সন্তানের বিষয়ে সবার সন্দেহ বাড়তে থাকে। এর ঠিক তিন দিন পর শাকিব ও বুবলী ফেসবুকে একই রকম পোস্ট দিয়ে জানান, শেহজাদ খান বীর নামে তাঁদের আড়াই বছর বয়সী সন্তান রয়েছে। সন্তানের বিষয়ে জানালেও সেদিন তাঁরা বিয়ের দিন-তারিখ সম্পর্কে কিছুই জানাননি।

সন্তানের খবর প্রকাশ্যে আসার পর ৩ অক্টোবর বুবলী তাঁর ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টের মাধ্যমে জানান, তাঁর জীবনের দুটি স্মরণীয় তারিখের কথা। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, একটি শাকিব খানের সঙ্গে তাঁর বিয়ের তারিখ, অন্যটি সন্তান জন্মের তারিখ। সেদিন বুবলী জানান, ‘এখন পর্যন্ত আমার জীবনের স্মরণীয় দুটি তারিখ। ২০ জুলাই ২০১৮, এটি আমাদের বিয়ের তারিখ। আর ২১ মার্চ ২০২০ আমার ছেলের জন্মতারিখ।’

এদিকে সন্তানের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরপরই শাকিব খান ও বুবলীর বিবাহবিচ্ছেদের খবরও সামনে আসে। বুবলী এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘বিয়ে করেছি সংসার করতে, বিচ্ছেদের জন্য নয়।’ এমন কথা বলার পরও তাঁদের দুজনকে একসঙ্গে কোথাও দেখা যায়নি। এমনকি সন্তানের খবর প্রকাশ্যে আসার পর তপু খান পরিচালিত ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রের রোমান্টিক গানের শুটিংয়ে দুজনের কাউকে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি। দুজনের জন্য শুটিং স্পটে বিশ্রামের জন্য পাঁচ তারকা হোটেলে দুটি আলাদা রুমের ব্যবস্থা করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।

বুবলীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে শাকিব খান সরাসরি এত দিন কিছু না বললেও বুধবার দেশের একটি গণমাধ্যমে আভাস দিয়েছেন।

সরাসরি কিছু না বললেও শাকিব খান পরোক্ষভাবে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কী নেই, সেটা যারা সবকিছু দেখেও না দেখার এবং বুঝেও না বোঝার ভান করে, আমি সময়মতো তা সবাইকে বুঝিয়ে দেব?’ পরোক্ষ জবাব দিয়ে বিষয়টি নিয়ে রহস্য না করে সরাসরি জানতে চাইলে শাকিব বলেন, ‘দেখেন, অনেক সত্য চাইলেই বাচ্চাটার (পুত্র শেহজাদ খান বীর) স্বার্থে প্রকাশ করতে পারি না। কারণ, বীর বড় হচ্ছে, আমি চাই না ভবিষ্যতে তার মনে এ নিয়ে কোনো বাজে প্রতিক্রিয়া তৈরি হোক।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাকিব খান ও বুবলীর সন্তানের খবরটি প্রকাশ্যে আসার পরপরই ঘটনা থেমে যেতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছিল, অতীতের ভুল বুঝতে পেরে অপু বিশ্বাস আবার শাকিব খানের জীবনে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। অপু তাঁর একাধিক সহকর্মীকেও এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। এদিকে সন্তান জয়ের কারণে অপু বিশ্বাস যাওয়া-আসা করতেন শাকিব খানের গুলশানের বাসায়। এসব তথ্য এক-দুই কান হয়ে বুবলীর কাছেও গিয়ে পৌঁছায়। এদিকে আব্রাহামের জন্মদিনে বাবা শাকিব খানের আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বুবলী তাঁর বেবিবাম্পের খবরটি জানান।

সন্তানের খবরটি সবার সামনে আনতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ বেছে নেন। এদিকে অপু বিশ্বাস ও বুবলীর সন্তানের বিষয়টা গণমাধ্যমে এভাবে আসার কারণে দেশের মানুষ একতরফা দোষারোপ করতে থাকে শাকিব খানকে। এসব নিয়ে শাকিব খান এর আগে মুখ খোলেননি। বুধবার দেশের একটি গণমাধ্যমে অপু বিশ্বাস ও বুবলীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা আভাস দিয়েছেন।

সরাসরি কিছু না বললেও কৌশলে শাকিব খান বলে দিয়েছেন অনেক কিছু। তিনি বলেছেন, ‘আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা পেয়েছি দুটি সময়। প্রথমটা করোনাকালে যখন একাকী ছিলাম। আর দ্বিতীয়টা যখন নিঃসঙ্গভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছি।’ শাকিব জানালেন, ‘আমি সেই দিনগুলোতে একাকী থাকায় নিজের জীবনের ফেলে আসা দিন নিয়ে হিসাব করার অফুরন্ত সময় পেয়েছিলাম। তখন নিজের ফেলে আসা জীবনের হিসাব-নিকাশ করতে গিয়ে দেখলাম, না বুঝে অনেক ভুল করে ফেলেছি। বেশির ভাগ ভুল করেছি ভুল মানুষের সঙ্গে মিশে। মনে হচ্ছে, সেই ভুলেরই খেসারত দিচ্ছি এখন। তাই জীবনের বাকি দিনগুলোতে আর কোনো ভুল মানুষের সঙ্গে মিশতে চাই না। আর কোনো ভুল করতে চাই না। ভুল করে মেশা সেই বাজে মানুষগুলোকে আর পাশে রাখতে চাই না। এখন থেকে শুধুই পজিটিভ ওয়েতে চলব। সৃষ্টিকর্তা আমাকে এমন উচ্চাসনে উপবিষ্ট করেছেন, আমার দর্শক-ভক্তরা আমাকে আকাশসমান ভালোবাসা দেওয়ার পরও কেন আমি ভুল পথে চলে আজ আমার কর্ম ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। এটিই এখন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুশোচনা।’

কথায় কথায় শাকিব খান জানিয়ে রাখেন, ‘অনেক অপ্রাপ্তির মধ্যেও আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি হলো আমার দুই প্রাণপ্রিয় সন্তান আব্রাহাম খান জয় ও শেহজাদ খান বীর। আমি আমার এই দুই আদরের সন্তান ও যেসব মানুষ, যারা আসলেই আমাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে, পছন্দ করে, তাদের নিয়েই আগামীর পথে এগোতে চাই।’

শাকিব খান আরও জানান, ‘দেখুন ফিল্মস্টার হলেও অন্য দশজনের মতো আমিও একজন সাধারণ মানুষ। সবার মতো আমারও ব্যক্তিগত জীবন বলে একটা কিছু আছে। প্রেম, বিয়ে ও সন্তান প্রত্যেক মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। এগুলো ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করার বিষয় নয়। আর আমি আমার পারসোনাল লাইফ পাবলিকের সামনে আনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমার ইচ্ছা ছিল, সময়মতো সুন্দর আয়োজনের মাধ্যমে ঘটা করে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে, সবার সঙ্গে একসঙ্গে আনন্দ করব। কিন্তু অপু বা বুবলী কেউই আমাকে সেই সুযোগ দেয়নি। আমার অপছন্দের কাজ করে সবার কাছে আমাকে ছোট করার পরও কী তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যায়? আমার সঙ্গে বিয়ে ও সন্তান নিয়ে তাদের মনে যখন এমনই উচ্ছ্বাস ছিল, তখন তারা বিয়ে বা সন্তান জন্মের পরপরই সবাইকে বিষয়টি কেন জানাল না! আমি তো তাদের মুখ বন্ধ করে রাখিনি। প্রকাশই যদি করতে হলো, তাহলে এত দেরিতে কেন? তাহলে কী তারা আমার শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাকে অপমান আর ধ্বংস করতে চেয়েছিল? এই প্রশ্ন আমি আমার ভালোবাসার দর্শক-ভক্তদের কাছেই রাখলাম।’