টেন্ডার ছাড়াই কাটা হচ্ছে কাটা হচ্ছে গাছ। বুধবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি পাবনা: কোনো নিয়ম না মেনেই পাবনা জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন সড়ক ও ডাকবাংলোর গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এসব গাছ কাটতে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কারও অনুমতিও নেওয়া হয়নি। বহু বছরের পুরোনো এসব গাছের কাঠ দিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থিত জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর ফার্নিচার তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও এসব ফার্নিচারের কিছু অংশ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল ও কর্মকর্তাদের বাড়িতেও দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বুধবার  সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, পাবনা শহরের নূরপুরস্থ জেলা পরিষদের ভেতরে গাছ কাটছেন শ্রমিকরা। গাছগুলো খণ্ড খণ্ড করে দ্রুত সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাছগুলো কাটার পরপরই ভেকু মেশিনের সাহায্যে মাটি দিয়ে স্থানগুলো ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। গাছগুলো করাতকলে নিয়ে কাঠ তৈরির পরে সেই কাঠগুলো বিভিন্ন ডাকবাংলাতে নিয়ে মিস্ত্রি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ফার্নিচার।

ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার ও মিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, ঈশ্বরদী ও চাটমোহর ডাকবাংলোতে অন্তত ৬০-৭০টি খাট, ৩০-৪০টি দরজা, ৪০-৬০টি আলমারিসহ বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরি করা হয়েছে। এগুলো তৈরি করতে অন্তত অর্ধশতাধিক গাছ লেগেছে।

বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, নিয়ম অনুযায়ী উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রয়োজনে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঝরে পড়া, ঝুঁকিপূর্ণ, পুরোনো কাছ কেটে ফেলার প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে কমিটি হবে। তাদের অনুমতির পর বন বিভাগকে মূল্য নির্ধারণের চিঠি পাঠানো হবে। বন বিভাগ সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে গাছগুলোর মার্কিং ও মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। পরে টেন্ডার ও নিলামসহ আনুসঙ্গিক নীতিমালা মেনে গাছগুলো কাঠতে হবে। কিন্তু জেলা পরিষদের এই গাছগুলো কাটতে কোনো নিয়ম মানা হয়নি।

জেলা পরিষদের গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও কাটাসহ যাবতীয় বিষয় দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন পরিষদের সার্ভেয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বন বিভাগের অনুমতি, উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির রেজুলেশন ও পেপার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু যেগুলো মরাধরা বা পড়েছিল সেগুলো বিনা টেন্ডারে কেটে রাখা আছে। কিন্তু ফার্নিচার কোন কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সে বিষয়ে আমি জানি না। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) কাজী আতিয়ুর রহমান বলেন, কিছু গাছ নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় সেগুলো কাটা হয়েছে। কোনো খাড়া গাছ কাটা হয়নি। বিষয়টি পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছিল। টেন্ডার করলে অন্যরা লাভবান হয়, এজন্য টেন্ডার করা হয়নি। 

তবে তিনি গাছ দিয়ে বানানো ফার্নিচারের অংশ প্রভাবশালী মহল ও কর্মকর্তাদের বাড়িতে যাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দেন।

এ বিষয়ে সামাজিক বন বিভাগ পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, আমরা শুধু গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দেই, বাকিটা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান করে। জেলা পরিষদের গাছ কাটার বিষয়টি জানি না, আপনাদের কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। চিঠি আসলে তো আমি জানতাম।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, আমি কিছু জানি না। আপনি এ বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা‌ করেন, উনি বিস্তারিত বলতে পারবেন। গাছ কাটার বিষয়ে আমি কোনো ফাইলে সই-স্বাক্ষর করিনি, কিছু জানিও না। আমি এসবের ভেতরে নাই।

এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। পরে আমি নিজেই সরেজমিনে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে গিয়ে দেখেছি, সেখানে কিছু গাছ কাটা হয়েছে। ডাকবাংলোর কেয়ারটেকারকে জোরালোভাবে জিজ্ঞাসা করায় সেও স্বীকার করল।

তিনি আরও বলেন, যারা এই ধরনের দুর্নীতি করছে, সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে তাদের প্রতিহত করব। জেলা পরিষদের সুফলটা একেবারে গ্রাম ও তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিব ইনশাআল্লাহ। এজন্য আমার জীবন দিয়ে হলেও চেষ্টা করব।