বৃদ্ধাকে ফ্রিজ কিনে দিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

| ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
বাঘা প্রতিনিধি: সিদ্দিক হোসেন ও নজরুল ইসলামকে রেখে ৫৫ বছর আগে জেলেমনি বেওয়ার স্বামী মাদার বখস মারা গেছেন। তারপর সংসারে কোনো আয়ের লোক ছিল না। স্বামীর রেখে যাওয়া কোনো জমিও নেই। কী করে সংসার চলবে চিন্তায় পড়েন। কোনো উপায় না পেয়ে শুরু করেন ঝিয়ের কাজ। এভাবে কোনোমতে দিন চলত।

ছেলেদের বড় করা হয়। বিয়েও দেওয়া হয়েছে। তারপর দুই ছেলে আলাদা হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই জেলমনির বয়স হয়েছে। বর্তমানে তার বয়স ৮০ বছর। এ বয়সে ঝিয়ের কাজ করতে পারেন না।

দুই ছেলে সহযোগিতা করতে চাইলেও সহযোগিতা নেবেন না। নিজের পেট আছে, কী করে চলবে, এখানে সেখানে চেয়ে এনে যা পান, তা দিয়েই চলেন। কিন্তু তার বড় ইচ্ছা ছিল একটি ফ্রিজের। টাকা নেই, কী করে ফ্রিজ কিনবেন। এর মধ্যে তিনি চিন্তা করেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে আবদার করবেন। তিনি কি করে মন্ত্রীর কাছে যাবেন- এলাকায় খোঁজ নিতে থাকেন, মন্ত্রী এলাকায় কবে আসবেন।

এরই মধ্যে মনিগ্রামে আওয়ামী লীগের সমাবেশ হচ্ছিল। এ সমাবেশে উপস্থিত হন বৃদ্ধা জেলেমনি। সেখানে মঞ্চের কাছে গিয়ে মন্ত্রীকে বলেন, তুমি আমার বেটা, আমাকে একটা ফ্রিজ কিনে দাও। আমি একটু একটু করে খাবার ফ্রিজে রাখব ও একটু একটু করে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে খাব। এ কথা শুনার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি ফ্রিজ কিনে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

সেই মোতাবেক নিজ অর্থায়নে মঙ্গলবার বাঘা মোজাহার হোসেন মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নছিম উদ্দিনের মাধ্যমে একটি ওয়াল্টন ফ্রিজ কিনে দেন। বৃদ্ধার বাড়ি উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়ন পারসাওতা গ্রামে। বর্তমানে তিনি টিনের ছাপড়া ঘরে বসবাস করেন।

এ বিষয়ে বৃদ্ধার ছেলে সিদ্দিক হোসেন ও নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ। এক ভাই অন্যের জমিতে দিনমজুর, আরেকভাই ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। এর মধ্যে আমরা মাকে নিয়ে খেতে চাই, কিন্তু মা আমাদের সঙ্গে খান না। এখানে সেখানে চেয়ে এনে নিজেই খান। আমরাও তেমন বাধা দিই না। এভাবেই চলে।

বৃদ্ধা জেলেমনি বেওয়া বলেন, ছেলের কাছে মা ফ্রিজ চেয়েছে, দিয়েছেন। আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার ছেলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হাজার বছর বেঁচে থাকুক। ছেলে যেন আরও বড় হয়, আমি তার জন্য আল্লাহর কাছে সেই দোয়া করি।

মনিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার পরিষদ থেকে তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়নের সব সুযোগ-সুবিধা তাকে দেওয়া হয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে ফ্রিজের জন্য আবেদন করার পর কিনে দিয়েছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ মন্ত্রীকে।