আগের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন প্লট মালিকেরা

রাজধানী ঢাকা | ফাইল ছবি

সাদ্দাম হোসাইন: ঢাকা শহরের চারপাশের এলাকায় আবাসিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন প্লট মালিকেরা। গ্রামীণ বসতি বিবেচনায় এসব এলাকার বড় একটি অংশে আগে দোতলার বেশি ভবন নির্মাণের অনুমতি মিলত না। এখন চার থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাবে। নতুন পাস হওয়া ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) ভূমি ব্যবহার পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

ভবন নির্মাণে আগের চেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে এমন এলাকাগুলোর মধ্যে আছে কেরানীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ। ২০১০ সালে পাস হওয়া ড্যাপের এই পাঁচ এলাকার ১৮২ বর্গকিলোমিটার গ্রামীণ বসতি হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল। এসব এলাকায় ভবন নির্মাণে ছাড়পত্রের আবেদন করলে কেউ দোতলার বেশি অনুমোদন পেতেন না। কিন্তু গত ২৩ আগস্ট নতুন পাস হওয়া ড্যাপে গ্রামীণ বসতি হিসেবে ভূমির শ্রেণি বিভাগ রাখা হয়নি। এগুলো মূলত আবাসিক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজউকের আওতাধীন এলাকার আয়তন ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু সব এলাকায় নগরায়ণের হার সমান নয়। ঢাকার আশপাশে অনেক এলাকা আছে, যেখানে এখনো কিছু গ্রামীণ পরিবেশ রয়েছে। এ বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ড্যাপে এই এলাকাগুলো গ্রামীণ বসতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু গত চার-পাঁচ বছরে এসব এলাকাতেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। নতুন নতুন ভবন তৈরি করছেন ভবন মালিকেরা, ওইসব এলাকায় আবাসনের চাহিদাও বেড়েছে। এমন বাস্তবতা বিবেচনায় গ্রামীণ বসতি শ্রেণিটি এবারের ড্যাপে বাদ দেওয়া হয়।

রাজউকের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুরে ৭ হাজার ৮৯৪ একর, কেরানীগঞ্জে ৭ হাজার ৫৩৯ একর, কালীগঞ্জে ৫ হাজার ৯৬৩ একর, নারায়ণগঞ্জে ৫ হাজার ৯২১ একর ও সাভারে ৯ হাজার ৩৬৯ একর জায়গা গ্রামীণ বসতি হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল।

রাজউকের নগর–পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালের ড্যাপে যে এলাকাগুলো গ্রামীণ বসতি হিসেবে চিহ্নিত ছিল, সেই এলাকাগুলোতে দোতলার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিত না রাজউক। এবারের ড্যাপে সেটির পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব এলাকায় বেশির ভাগ অংশেই ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআর–এর মান নূ৵নতম ২ পাওয়া যাবে। ফলে চার-থেকে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা যাবে, প্রশস্ত রাস্তার পাশে হলে ভবন আরও উঁচু করা যাবে। এ ছাড়া প্লটের পরিবর্তে ব্লকভিত্তিক (কয়েকটি প্লট একসঙ্গে) উন্নয়নে গেলে ভবনের উচ্চতা আরও বাড়বে। পাশাপাশি এসব ভবনে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসনের সুবিধা রাখা হলে অতিরিক্ত প্রণোদনা পাওয়া যাবে।

বেড়েছে আবাসিক এলাকা
রাজউকের আওতাধীন এলাকার কোন জমি কী কাজে ব্যবহার করা যাবে তার একটি বিন্যাস থাকে; এটি ভূমির শ্রেণিবিভাগ হিসেবে পরিচিত। ড্যাপে এই শ্রেণিবিভাগগুলো চিহ্নিত থাকে। ফলে ড্যাপে কোনো জমি জলাশয় হিসেবে দেখানো হলে সেখানে ভবন নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যায় না। আবার ড্যাপে কোনো জমি আবাসিক হিসেবে দেখানো হলে সেখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা যায় না।

রাজউকের নগর-পরিকল্পনা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সালের ড্যাপে ভূমির শ্রেণিবিভাগ ছিল ১৭টি, এবারের ড্যাপে ভূমি শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে ১৩টি। ভূমির শ্রেণির নতুন বিন্যাসে ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে আবাসিক জমির পরিমাণ বেড়েছে। এতে ঢাকার আশপাশের এলাকায় আবাসিক ভবন নির্মাণের সুযোগ বেড়েছে।

রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের ড্যাপে গাজীপুরে ১৯ হাজার ৯৬৭ একর জমিতে আবাসিক ভবন নির্মাণের সুযোগ ছিল। এবারের ড্যাপে সেটি বেড়ে ৪২ হাজার ১৩৫ একর ধরা হয়। কেরানীগঞ্জে ৭ হাজার ৯৬৫ একর থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার ৪৩৩ একর জমিতে আবাসিক ভবন নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে; কালীগঞ্জে ৬ হাজার ১৫১ একর থেকে বাড়িয়ে আবাসিক ভবন নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে ২২ হাজার ২১৪ একর জমিতে; নারায়ণগঞ্জে ১৮ হাজার ১৯৭ একর জায়গায় এবার ২৪ হাজার ৭২৭ একর এবং সাভারে ১৭ হাজার ৪৮১ একরের জায়গায় ২৬ হাজার ৫৩১ একর জমিতে আবাসিক ভবন নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে।

ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগে যেসব জমিতে আবাসিক ভবন নির্মাণের সুযোগ পাওয়া যেত না, এখন সেখানে আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকা মহানগরে আবাসনের চাহিদার পাশাপাশি মূল ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমিয়ে ঢাকার বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।