প্রবল বর্ষণে বরিশাল নগরের সব রাস্তাঘাট পানির নিচে

টানা বৃষ্টিতে বরিশাল নগরের সব রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত। সোমবার নগরের আগরপুর রোডে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বরিশাল: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রোববার মধ্যরাত থেকে টানা বৃষ্টিতে বরিশাল নগরের সব সড়ক পানির নিচে চলে গেছে। আজ সোমবার ভোররাত থেকে একটানা মাঝারি ও ভারী বর্ষণে নগরের অধিকাংশ রাস্তাঘাটে হাঁটুপানি জমেছে। টানা প্রবল বর্ষণ, উঁচু জোয়ারের পাশাপাশি দিনভর ঝোড়ো বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছে বরিশাল নগরের জীবনযাত্রা। লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করছে না। এমনকি নগরের অনেক নিচু এলাকার বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে।

গতকাল রাত থেকে বরিশালে বৈরী আবহাওয়া এবং থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। আজ ভোর থেকে মাঝারি এবং দুপুরের পর তাতে আরও গতি পেয়ে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এর সঙ্গে নদ-নদীতে অধিক উচ্চতার জোয়ারের কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নগরের সদর রোড, গোরস্থান রোড, কালুশাহ সড়ক, বটতলা, বাংলাবাজার, কলেজ অ্যাভিনিউ, ফকিরবাড়ি সড়ক, কালীবাড়ি সড়ক, রাজাবাহাদুর সড়ক, মল্লিকবাড়ি সড়ক, ব্রাউন কম্পাউন্ড, আগরপুর রোড, পলিটেকনিক সড়ক, বাংলাবাজার জলিল রোড, আমানতগঞ্জ, পলাশপুরসহ নগরের সব সড়কই পানিতে নিমজ্জিত। এ ছাড়া রূপাতলী হাউজিং, দপদপিয়া, পলাশপুরসহ নগরের পশ্চিমাংশের বিশাল এলাকায় বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষজনের ঘর থেকে বেরোনোই মুশকিল হয়ে পড়েছে।

বৃষ্টিপাতের কারণে শ্রমজীবী মানুষের অশেষ দুর্ভোগ হচ্ছে। নগরের বাংলাবাজার এলাকায় বিকেলে রিকশাচালক আবুল কালাম বৃষ্টিতে ভিজে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় আজ তেমন আয় হয়নি। সকালে বৃষ্টির কারণে বাইরে নামতে পারেননি। ঘরে বাজার-সওদা নেই। তাই বাধ্য হয়ে দুপুরের পর রিকশা নিয়ে নেমেছেন। মাত্র ১০০ টাকা আয় করেছেন। আবুল কালাম বলেন, ‌‘এই টাহা দিয়া কেমনে চাইল-ডাইল কিনমু কইতে পারি না। দুই-একদিনে অবস্থা ভালো অইবে হেইয়ার কোনো আলামত দেহি না।’

এদিকে দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীতে উঁচু জোয়ার বইছে। সব নদীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জোয়ার পরিমাপক শাখা জানায়, আজ বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভোলা খেয়াঘাটসংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীতে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার, দৌলতখান উপজেলার মেঘনা-সুরমা মোহনায় বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটার বিষখালী নদীতে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ার প্রবাহিত হচ্ছে।

বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার বলেন, রোববার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর বেশির ভাগই হয়েছে আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায়। প্রবল বর্ষণ এখনো অব্যাহত আছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এর প্রভাবে চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।