বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রে গণসংগীত অনুষ্ঠান 'শিকল ভাঙার গান' | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি পাবনা: হিম হিম, স্বল্পায়ু দিন ক্রমে মিইয়ে যাচ্ছে, শেষ বিকালে কুয়াশার আবছা চাদর প্রকৃতিকে ঢেকে শিশিরের শব্দের মতো নামছে সন্ধ্যা। এর মধ্যে দর্শকে পূর্ণ মিলনায়তন। মঞ্চে তখন মৃদু আলো। ঘোষণা এল অনুষ্ঠান শুরুর। এরপরই সমবেত কণ্ঠে শিবদাস বন্দোপাধ্যায়ের `বাংলাদেশে সূর্যের এক নাম' পরিবেশনা। এমনই আবহে শুক্রবার সন্ধ্যায় পাবনার বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সাম্য-সম্প্রীতির আহ্বানে গণসংগীত অনুষ্ঠান ‘শিকল ভাঙার গান’।
বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন পাবনা গণশিল্পী সংস্থা। হেমন্তের অনিন্দ্যসুন্দর সন্ধ্যায় এমন আয়োজনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন দর্শকেরা। এরপর মোহিন চৌধুরীর 'মুক্তি মন্দির সোপান তলে', সলিল চৌধুরীর 'পথে এবার নামো সাথী, পথেই হবে পথ চেনা', সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'হিমালয় থেকে সুন্দর বন হঠাৎ বাংলাদেশ', শিবদাস বন্দোপাধ্যায়ের 'আজ যত যুদ্ধবাজ দেয় হানা হামলাবাজ' ও 'এই শতাব্দীর আওয়াজ একসঙ্গে চল', আল-আমীন হোসেন লিমনের 'মেনেছি আর মানবো না, সয়েছি আর সইবো না', হেমাঙ্গ বিশ্বাসের 'সাথীদের খুনে রাঙা পথে দেখ হায়নার আনাগোনা', মুকুন্দ দাসের 'বান এসেছে মরা গাঙে তুলতে হবে নাও'। এ গানেই মেতে ওঠে পুরো মিলনায়তন। করতালি শব্দে মুখর হয় চারপাশ।
এরপর সুমন রেজা খানের 'কেন সন্ত্রাস কেন চাঁদাবাজ', নাজিম মাহমুদের 'দিন এসেছে এই বার', জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট', 'এই শিকল পরা ছল, মোদের এ শিকল পরা ছল' ও সলিল চৌধুরীর 'ও আলোর পথ যাত্রী, এ যে রাত্রী, এখানে থেমো না'।
মোসফেকা জাহান কণিকার নির্দেশনায় গণশিল্পী সংস্থার শিল্পী- আল আমীন হোসেন লিমন, সীমান্ত আজাদ, বাবলা ওয়াজেদ, আনিছুর রহমান শাহীন আকবর, মোরশেদুল ইসলাম অন্তু, মোস্তফা কামাল, হাছিবুল হাসান হিমেল, রাকিবুজ্জামান শাদ, তনুশ্রী দাস, অঞ্জলী ভৌমিক, নমিতা রায়, ফেরদৌসী আক্তার রুপা, নুসরাত জাহান স্বর্ণা, নিপা ইসলাম, দ্বীপ্রতা জাহান, ইরিনা জাহান ও প্রিয়ন্তী মালাকার এ অনুষ্ঠানে গণসংগীত পরিবেশন করেন ।
হেমন্তের সন্ধ্যাটি উপভোগ করেন জেলা শহরের সংস্কৃতিপ্রেমীরা। মুগ্ধতা নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। দর্শকসারিতে বসে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন পাবনার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুল্লাহ। অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, এখন নাগরিক কিংবা গ্রামীণ জীবনে নানা সংকটে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের এরমধ্যে এই আয়োজন সত্যি মুগ্ধকর।
একই রকম অনুভূতির কথা জানান পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম পাকন। তিনি বলেল, গণসংগীত গণমানুষের জীবনের সংগীত। মানবিক মূল্যবোধ, সাম্য, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে গণসংগীত চিরকাল মানুষকে উজ্জীবিত করে আসছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গণসংগীত এ দেশের মানুষকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছিল।