রাবিতে স্বাধীনতাবিরোধীরা আমাকে অবাঞ্ছিত করেছে: সংসদ সদস্য বাদশা

রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। নগরের হড়গ্রামে নিজ কার্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেওয়া বক্তব্যের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী মানববন্ধন করে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন, তাঁদের ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি’ বলেছেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।

রোববার বিকেল পৌনে চারটার দিকে নগরের হড়গ্রামে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের ওপর হামলার’ ঘটনায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ তুলে গতকাল শনিবার কর্মবিরতি ডেকেছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। আজ বেলা তিনটার দিকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন।

কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও কখন থেকে কাজে ফিরবেন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি ইমরান হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করা মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হবে—এমন আশ্বাসে তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

গতকাল দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। এর আগে ঘটনার দিন গত বুধবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন তাঁরা।

এদিকে শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ‘একপক্ষীয়’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মানববন্ধন করেন তাঁরা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে করা সংবাদ সম্মেলনে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে ছিলাম। সেখানে আমার দাবি ছিল, কর্মবিরতি করেন, তবে জরুরি চিকিৎসা চালিয়ে যান। আরেকটা দাবি ছিল—মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর লাশের ময়নাতদন্ত করা। এই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ১০ দিন পর হলেও এটা করতে হবে। এসব দাবি করার কারণে আজকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির ব্যক্তিরা নানা ধরনের রাজনৈতিক দলে ঢুকে আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমি কি অবাঞ্ছিত হব? রাকসু ভবনে ভিপির তালিকা থেকে আমার নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। আমার নাম এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুছে দেওয়া কি সম্ভব? এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস যদি কেউ লেখেন, আমার নাম লিখতেই হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কথা বলেছেন দাবি করে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১০ বছরে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা এর পেছনে আছে। এই হত্যাও এর ধারাবাহিকতা। সামনে নির্বাচনের আগে সেই ধারাবাহিতা শুরু হয়েছে। আমি সেই জন্য বলেছি, লাশের ময়নাতদন্ত করা হোক।’

‘কারা হত্যা করেছে’—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘হত্যা যাঁরা করেছেন, তাঁরা আত্মরক্ষার জন্য ওই পলিথিন আর মগজের গল্প এনেছেন। আমি যখন বক্তৃতা দিই, তখন অনেক পত্রিকায় উঠেছে যে মগজ হবিবুর রহমান হলে আর রোগী জরুরি বিভাগে। এ কথা আমি শুধু রেফার করেছি। সে জন্য এটাকে হত্যাকাণ্ড ধারণায় নিয়ে ময়নাতদন্ত দাবি করছি।’

বুধবার রাত আটটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এস জে এম শাহরিয়ার হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান। এরপর দ্রুত তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শাহরিয়ারকে হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রায় ৪০ মিনিট চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রাখা হয়। চিকিৎসায় অবহেলায় সহপাঠী মারা যাওয়ায় তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ওই সময় হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও আনসার সদস্যরা তাঁদের মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁরা হাসপাতালের গাছের টব ভাঙেন।

এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের অপর কমিটিতে শুধু হাসপাতালের লোকজন আছেন। এদিকে হাসপাতালে সংঘর্ষের ঘটনা এবং শিক্ষার্থীর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। এ ছাড়া শহীদ হবিবুর রহমান হলের ওপর থেকে শাহরিয়ার কীভাবে পড়ে গেলেন, তা তদন্তে হল প্রশাসন অভ্যন্তরীণ তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।