সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে লাল শাপলার গালিচা

সিলেটের জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর যেন লাল শাপলার রাজ্য | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি সিলেট: হেমন্তকালের ভোরে হালকা কুয়াশাঘেরা সকালে সবেমাত্র সূর্য আকাশে উঁকি দিচ্ছে। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ভারতের সীমান্তবর্তী মেঘালয়ের সুবজ পাহাড়ের পাদদেশে চারটি বিলে তখন মেলতে শুরু করেছে লাল শাপলা ফুল। বিলের পানিতে লাল শাপলা ফোটার দৃশ্য দেখে প্রথমে যে কারোরই মনে হবে, পানিতে কেউ লাল চাদর বিছিয়ে দিয়েছেন।

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার উত্তর-পূর্ব দিকে সীমান্তঘেঁষা ডিবি বিল, কেন্দ্রী বিল, হরফকাটা ও ইয়াম বিলে লাল শাপলা ফোটে। চারটি বিলে শীতকালের শুরুতেই ফোটে লাল শাপলা। এর অবস্থান সিলেট শহর থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে। লাল শাপলার মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যটকেরা ভিড় জমান এর পাহাড়ের কোলে সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, সকালে যখন সূর্য উদয় হচ্ছিল, তখন ইয়াম বিলে নৌকার মাঝিদের মধ্যে দু-একজন উপস্থিত হয়েছেন। নৌকা ঘাটে একজন পর্যটকদের নৌকা দিতে ক্রম সাজাচ্ছিলেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে নৌকার মাঝির সংখ্যা। অন্যদিকে বাড়তে থাকে পর্যটকদের আনাগোনাও। সকাল সাড়ে ছয়টা ও সাতটার দিকে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সাড়ে ছয়টার দিকে নৌকায় বিলের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে লাল শাপলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দেখা গেছে অনেককে।

জানা গেছে, উপজেলার ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল, কেন্দ্রী বিলসহ প্রায় ৯০০ একর এলাকাজুড়ে লাল শাপলার ‘রাজ্য’। সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার পথেই লাল শাপলা বিল। এ জন্য অনেকে জাফলং যাওয়ার পথেই শাপলা বিল ঘুরে যান।

পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, লাল শাপলা বিলটি দেখে যে কারোরই মন ভালো হয়ে যাওয়ার কথা। সাত সকালে এমন দৃশ্য আর কোথাও পাওয়া যাবে কি না, সন্দেহ আছে। জৈন্তাপুরের স্থানটি ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য রাস্তা মেরামত করা প্রয়োজন।

শাপলা বিলে বেড়াতে আসা সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক শিশির বসাক বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে বিলের মধ্যে লালগালিচা বিছানো এমন দৃশ্য যে কারও মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেবে।

সিলেটের জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরের লাল শাপলার রাজ্যে বেড়াতে আসেন পর্যটকেরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

শাপলা বিল সুরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ বলেন, শাপলা বিলে পর্যটকদের বরণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। বিলে নৌকা ভাড়া নির্দিষ্ট আছে। কয়েক দিনের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে ভাড়ার তালিকা টাঙানো হবে। পর্যটকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে নজর রাখছে কমিটি।

সিলেটের জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলম দস্তগীর আহমেদ বলেন, লাল শাপলার বিলে যাতে পর্যটকেরা হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য বিলের আশপাশে সার্বক্ষণিক পুলিশের একটি দল টহল দিচ্ছে। স্থানীয় ও সুরক্ষা কমিটির কাছে থানার নম্বর দেওয়া আছে, যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে তাঁরা জানাতে পারেন।