জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপের দাবিতে ‘গ্রাম-শহর তরুণদের সংহতি’ নামের সাইকেল শোভাযাত্রা। শনিবার সকালে রাজশাহী শহরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
প্রতিনিধি রাজশাহী: জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপের দাবিতে রাজশাহীতে একদল তরুণ-তরুণী সাইকেল চালিয়ে সংহতি কর্মসূচি পালন করেছেন। ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু সংকট ও সংঘাত নিরসনে গ্রাম-শহর তরুণদের সংহতি’ নামের এ কর্মসূচির আয়োজক উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরাম। কর্মসূচিতে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৩০ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের শতাধিক তরুণ অংশগ্রহণ করেন।
আজ শনিবার সকালে রাজশাহী শহর থেকে এ সাইকেল শোভাযাত্রা শুরু হয়। বেলা ১১টায় তানোর উপজেলার গোকুল মথুরা গ্রামে শোভাযাত্রাটি পৌঁছে সেখানে সমাবেশ হয়। অংশগ্রহণকারী তরুণ-তরুণীরা অধিক কার্বন নিঃসরণকারী ধনী দেশগুলোর প্রতি লাল কার্ড প্রদর্শন, জলবায়ু সুরক্ষার গান, সাইক্লিং, কবিতা ও খেলাধুলার মধ্য দিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচতে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানান।
তাঁরা বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে দিনদিন খরা, তীব্র তাপপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে পানিবণ্টন নীতিমালায় বৈষম্যের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের জলবায়ু ন্যায্যতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। পানিসংকটের কারণে গ্রাম ও শহরের মধ্যে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি দিনদিন নষ্ট হচ্ছে।
দ্রুত প্রান্তিক মানুষবান্ধব পানিবণ্টন নীতিমালা বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা। আগামী প্রজন্মের জন্য ‘নিরাপদ বরেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁরা পানিসংকট সমাধানে স্থায়ী পদক্ষেপসহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো সুরক্ষা এবং পদ্মা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে বৃহৎ আকারে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানান তাঁরা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিয়ে কথা বলেন বারসিক গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী রেশমশিল্পসহ ফসল উৎপাদনে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসংকটের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এ ক্ষতিপূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের আহ্বায়ক রুবেল হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সদস্যসচিব শাইখ তাসনিম জামাল, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সাবিত্রী হেমব্রম। প্রতিবাদী কবিতা পাঠ করেন লোককবি আফাজ উদ্দিন কবিরাজ।
সাবিত্রী হেমব্রম বলেন, এখানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা-বাঙালিসহ নানা পেশার মানুষ বসবাস করেন। জলবায়ু পরিবর্তনসহ পানির সংকটের কারণে তাঁদের বৈচিত্র্যময় পছন্দের খাদ্য ও পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পানি অধিকারের দিকগুলোও সংকুচিত হচ্ছে। এ সংকট মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।