| ছবি: রয়টার্স

মাসুদ মিলাদ: রাশিয়ার পর এবার ইউক্রেন থেকে গম আমদানি শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রায় এক লাখ টন গম নিয়ে দুটি জাহাজ পৌঁছেছে বন্দরে। বসুন্ধরা ও এস আলম গ্রুপ এই গম আমদানি করেছে বলে শিপিং এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত জুলাইয়ে জাতিসংঘ এবং তুরস্কের সহায়তায় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে খাদ্যসামগ্রীবাহী জাহাজ চলাচলবিষয়ক চুক্তি হয়। চুক্তির পর ৭ আগস্ট ইউক্রেন থেকে গম রপ্তানি শুরু হয়। চুক্তির তিন মাস পর ইউক্রেন থেকে গম আমদানি শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। ইউক্রেন থেকে এমন সময়ে গম এল, যখন চুক্তির মেয়াদ এক মাস বাকি আছে। আগামী নভেম্বরে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। চুক্তির মেয়াদ না বাড়ালে ইউক্রেন থেকে রপ্তানি আবারও বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

ইউক্রেন থেকে সর্বশেষ দেশে গম আমদানি করা হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে। বসুন্ধরা গ্রুপ ওই গম আমদানি করেছিল। এরপর জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দেশটি থেকে আর গম আমদানি করা হয়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। সেই হিসাবে ১০ মাস পর দেশটি থেকে আবার গম আমদানি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, ইউক্রেনের ওদেসা বন্দর থেকে ৪৬ হাজার টন গম নিয়ে গত শুক্রবার বন্দরে ভিড়েছে ‘এসএসআই প্রাইড’ নামের একটি জাহাজ। এই জাহাজে করে গম আমদানি করেছে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ। এই জাহাজ ছাড়াও বসুন্ধরা গ্রুপ আরেকটি জাহাজে করে ৫৫ হাজার টন গম আমদানি করেছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার টন গম খালাসের জন্য শুল্কায়ন করেছে গ্রুপটি। টনপ্রতি দর পড়েছে ৩৯০ ডলার। গত সপ্তাহে জাহাজটি বন্দর জলসীমায় এসে পৌঁছে। জাহাজটির স্থানীয় প্রতিনিধি প্যাসিফিক ওশেন লাইনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, ইউক্রেন থেকে আসা জাহাজটি থেকে গম খালাসের প্রস্তুতি চলছে।

এর আগে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাশিয়া থেকে গমবাহী একটি জাহাজ বন্দরে পৌঁছায়। ‘এমভি সীলাক’ নামের ওই জাহাজে করে ৫২ হাজার ৮৪৫ টন গম আমদানি করেছিল সরকার। সরকারি পর্যায়ে চুক্তির ভিত্তিতে (জিটুজি) খাদ্য অধিদপ্তর এই গম আমদানি করে। সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ১ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টন গম কেনার অনুমোদন দিয়েছিল। রাশিয়া থেকে সরকারি গমের দ্বিতীয় চালানটি চলতি মাসের শেষে বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। দ্বিতীয় চালানে এক জাহাজে ৫৫ হাজার টন গম রয়েছে। সরকারিভাবে রাশিয়া থেকে গম আমদানি হলেও যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বেসরকারি খাতে গমবাহী কোনো জাহাজ বন্দরে আসেনি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে সবচেয়ে বেশি গম আমদানি হতো দেশ দুটি থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশ দুটি থেকে আনা হয় মোট আমদানি হওয়া গমের ৪৪ শতাংশ। যুদ্ধ শুরুর পর দেশ দুটির বিকল্প হিসেবে ভারত থেকে গম আমদানি শুরু করেন এ দেশের ব্যবসায়ীরা। অবশ্য ভারত ১৪ মে গম রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরপর নতুন করে সেই বাজার আর খোলেনি। অবশ্য পুরোনো ঋণপত্রের বিপরীতে এখনো গমের কিছু চালান আসছে ভারত থেকে।

দেশে বছরে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদার বড় অংশই আমদানি করে মেটানো হয়। সর্বশেষ গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬২ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে।