রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লিপাত্র বা রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কাজ শুরুর আগের দিন মঙ্গলবার প্রকল্প এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিশেষ প্রতিনিধি, রূপপুর থেকে: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সফলতা দেখে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে এই প্রকল্পের কর্মীদের সহযোগিতা নিতে চায় এ কর্মসূচি নেওয়া অন্য কয়েকটি দেশ। এ বিষয়ে একটি দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

আজ বুধবার নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটের রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (পারমাণবিক চুল্লিপত্র) স্থাপন করা হবে। এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রি-অ্যাক্টর স্থাপন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মাইলফলক অগ্রগতি। কারণ রি-অ্যাক্টর ভেসেলকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হার্ট বা হৃদপিণ্ড বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ রি-অ্যাক্টর ভেসেল স্থাপনের উদ্বোধন করবেন।  

মঙ্গলবার এ প্রকল্প পরিদর্শনের সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের জানান, দুয়েকটি দেশ এ ধরনের প্রকল্প করতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের সঙ্গে চুক্তি করেছে। তারা আগাতে পারছে না বলে আমাদের কর্মীদের নিতে চায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ এতটাই সফলতার সঙ্গে হচ্ছে যে, আমাদের সাধারণ কর্মীরা কতটা অসাধারণ কাজ করতে পারে তা প্রমাণ হয়েছে। এ কারণেই একটি দেশের পক্ষ থেকে আমাদের এই প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে তারা কথা বলেছে। আমাদের প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তারা এই কর্মীদের সহযোগিতা নিতে চায়। আমরা ১২০০ থেকে ১৫০০ কর্মীকে রাশিয়া নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিটি দেশ সারা পৃথিবীকে জানাতে চায়। গত মাসে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বাৎসরিক কনফারেন্স বড় বড় দেশ আমাদের কাজের অগ্রগতিতে হতবাক হয়েছে। তারা বলেছে বাংলাদেশ এই সময়টায় কীভাবে এত আগালো? আমরা বলতে পারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার টিমের সবার আন্তরিকতায় এভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের ফলে বিদেশে আমাদের মর্যাদা বেড়েছে। আমাদের দেশের যারা বিদেশে কাজ করে তাদের ওয়েজেস বেড়ে যাবে।

এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আরএনপিপির প্রকল্প পরিচালক ড. সৌকত আকবর। তিনিও মন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। আর দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে ২০২৪ সালে। গত বছর ১০ অক্টোবর প্রথম ইউনিটের রি-অ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করা হয়।

এই প্রকল্পের কাজ সব মিলিয়ে ৫৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৭৩ ভাগ এবং দ্বিতীয় ইউনিটের প্রায় ৪৮ ভাগ। আগামী বছর অক্টোবরের মধ্যে রাশিয়া থেকে এই প্রকল্পের জ্বালানি ইউরেনিয়াম আসা শুরু হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে জ্বালানি চাওয়া হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সরবরাহ কোম্পানির সঙ্গে অনেক আগেই এ জ্বালানি সরবরাহ সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এই প্রকল্পে আজীবন ওই কোম্পানিটি জ্বালানি সরবরাহ করবে। 

এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার পর এখানকার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে সময় লাগতে পারে বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত টাইমলাইনে আগাচ্ছে। আমরা নির্দিষ্ট সমযের মধ্যে কাজ শেষ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।   আমার প্রস্তুতি থাকলেই হবে না। যারা কিনবে (পিডিবি) তাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে।

তবে জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন লাইনের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে আমরা কাজ করছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করি। এ ধরনের প্রকল্পে বেশি কিছু বলা যায় না। কারণ অনেক কিছু নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত।

প্রকল্পের অর্থ পরিশোধ সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লেনদেন নিযে কোনো সমস্যা নেই। ইআরডি এই সমস্যার সমাধান করছে। দুই দেশ মিলে এনিয়ে কাজ করছে।   এজন্য প্রকল্পের কাজ থেমে নেই। আমরা ইতোমধ্যে দুই কিস্তি পরিশোধ করেছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

তবে, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ নেওয়ার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, প্রথমে ইউনিট ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উৎপাদনে যাবে। এই প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যাবে ২০২৪ সালে। দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে ২০২৪ সালে এবং এ ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যাবে ২০২৫ সালে।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর ইউনিয়নে রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আর্থিক ও প্রকল্প বাস্তবায়নসহ সার্বিক সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে স্থাপন করা হচ্ছে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বশেষ প্রযুক্তি থ্রি জি (প্লাস) ভিভিইআর ১২০০ মডেলের রি-অ্যাক্টর। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) প্রকৌশল শাখা এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।