সিসি ক্যামেরা স্থাপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে নারীর চলাচল নিশ্চিত করতে রাজধানীর ১০০টি গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘গণপরিবহনে নারীর নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কর্মসূচি’র আওতায় এসব ক্যামেরা লাগানো হলো। এটি একটি পাইলট কর্মসূচি। কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংগঠন দীপ্ত ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের কর্মীরা সিসি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে তিন মাস অন্তর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
রোববার রাজধানীর মিরপুরের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনভেনশন সেন্টারে ফিতা কেটে এবং প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাসে চড়ে সিসি ক্যামেরার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোলসহ অন্য অতিথিরা।
দীপ্ত ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নাধীন ‘গণপরিবহনে নারীর নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কর্মসূচি’ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদে মোট ২ কোটি ৬৩ লাখ ১৯ হাজার টাকায় এ কর্মসূচি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। করোনা মহামারির জন্য কর্মসূচির মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই প্রথমবার ১০০টি গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা লাগানো হলো।
তবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে রাজধানীর ১০৮টি গণপরিবহনে আজ সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা জানানো হয়। দীপ্ত ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ হিসাব দেওয়া হয় মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু দীপ্ত ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১০০টি বাসে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কথা জানানো হয়েছে এবং উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ১০০টি বাসে সিসি ক্যামেরা উদ্বোধনের কথা বলা হয়। দুই পক্ষের এই ভিন্ন তথ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। তবে নারীর সঙ্গে পুরুষের ক্ষমতায়ন পাল্লায় মাপলে নারীর পাল্লা ওপরে আর পুরুষের পাল্লা নিচে থাকে। নারীর স্বাধীন চলাচলসহ ক্ষমতায়নে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বর্তমান সরকারের আমলে নারী নির্যাতনের ঘটনা কমেছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, টাঙ্গাইলে বাসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার রুপা হত্যা মামলায় চার আসামির মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অন্য ঘটনায় অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা থাকলে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা সহজ হবে। আর কেউ অপরাধ করার আগে একবার হলেও এটা ভাববেন, তিনি অপরাধটি করবেন কি না।
প্রতিমন্ত্রী গণপরিবহনের মালিকদের প্রতি বাসের চালক ও সহকারীদের যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, এতে বাসে সহিংসতার সংখ্যা কমবে। দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা দেখতে না চাইলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দেওয়ারও আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।
মিরপুরের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনভেনশন সেন্টারে ফিতা কেটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
অনুষ্ঠানের সভাপতি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, শুধু ১০০টি বাসে নয়, ধীরে ধীরে রাজধানীর এবং সারা দেশের গণপরিবহনগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এসব ক্যামেরা নারী বা পুরুষ আলাদাভাবে চেনে না, শুধু মানুষ চেনে। তাই বাসে কোনো পুরুষ যাত্রী হয়রানির শিকার হলে তিনিও এসব সিসি ক্যামেরার সুবিধা পাবেন। কাউকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে মেরে ফেলা হলো কি না, তা-ও নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ অন্যরা প্রজাপতি পরিবহনের যে বাসে সিসি ক্যামেরাটি উদ্বোধন করেন, ওই বাসের চালক সবুজ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এটা বসানোর ফলে বাসের চালক বা সহকারী কোনো ঘটনায় আসলেই অপরাধী কি না, সেটাও বের হয়ে আসবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আগা খান মিন্টু। এই সংসদ সদস্যের সমর্থকেরাও কনভেনশন সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় স্লোগান দিতে থাকেন। আগা খান মিন্টু বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘এটি সরকারি অনুষ্ঠান। দলীয় কোনো অনুষ্ঠান নয়। এখানে আমরা এসেছি সহযোগিতা করার জন্য।’ তিনি আরও বলেন, বাসে সিসি ক্যামেরা লাগানোর ফলে নারীর যাতায়াত নিরাপদ হবে। কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বাড়বে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফেরদৌসী বেগম এবং দীপ্ত ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান ‘গণপরিবহনে নারীর নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কর্মসূচি’র বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বাসমালিক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন সিরাজুল ইসলাম খান।