পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: সম্প্রচার চলতে চলতে গতকাল শনিবার হঠাৎই কিছুক্ষণের জন্য ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল হ্যাকারদের কবলে পড়েছিল। সংবাদ বুলেটিন চলার সময় হ্যাকাররা টিভির পর্দায় সরকারবিরোধী ছবি ও ক্যাপশন প্রকাশ করে সম্প্রচার কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছিল। খবর বিবিসির
ইরানে পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চলমান বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নতুন করে তিন বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর এ হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটল।
শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে টিভিতে সংবাদ বুলেটিন চলার সময় হঠাৎ পর্দায় কিছু ছবি ভেসে ওঠে। পর্দায় প্রথমে একটি মুখোশ দেখা যায়। এর পরপরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনির একটি ছবি ভেসে ওঠে। ওই ছবিতে দেখা যায়, খামেনির চারপাশে আগুন জ্বলছে।
হ্যাকাররা তাদের দলটির নাম ‘আদালত আলি’ বা ‘আলির বিচার’ বলে উল্লেখ করেছে।
একটি ছবিতে দেখা গেছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মাথাকে নিশানা করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি পুলিশি হেফাজতে নিহত তরুণী মাসা আমিনি এবং তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করার সময় নিহত আরও তিন নারীর ছবিও দেখা গেছে।
একটি ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘আমাদের সঙ্গে যুক্ত হোন এবং জেগে উঠুন’। আরেকটিতে লেখা হয়, ‘আপনাদের থাবায় আমাদের মতো তরুণদের রক্ত ঝরছে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল।
আয়াতুল্লা আলি খামেনির বিরুদ্ধে এ ধরনের বিদ্রোহ প্রদর্শন বিরল ঘটনা। তিনি ইরানে প্রায় সম্পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি। তবে মাসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যে মানুষকে প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করতে দেখা যাচ্ছে।
হিজাব না পরে কঠোর পর্দাবিধি ভঙ্গ করার অভিযোগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী মাসাকে আটক করেছিল। পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি কোমায় চলে যান। ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসার মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরে সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তেহরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে সেখানকার নারী শিক্ষার্থীরা ‘বেরিয়ে যান’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
শনিবার সকালে সানন্দাজে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তাঁদের একজন বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানিয়ে গাড়ির হর্ন বাজানোর পর ওই গাড়িতেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অনলাইনে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মাশাদ এলাকায় এক নারী অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। তাঁর গলায় গুলি লেগেছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে ইরানে রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, সানন্দাজে ‘প্রতিবিপ্লবীরা’ এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন।
মাসার পরিবার ও বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে এই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। তবে শুক্রবার ইরানের সরকারি ফরেনসিক মেডিসিন অর্গানাইজেশন বলেছে, মাসা আমিনির মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ায় কয়েকটি অঙ্গ অকার্যকর হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মাথায় আঘাতজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়নি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুসারে, ইরানে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে বেশ কিছু শহরে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।